আমার মাকে বল্লেন, দিদি, আরও কিছু টাকা খরচ করে ইঁটখোলাটাকেই একটা পুকুর কাটিয়ে দিই। তিন-চার হাজার টাকা খরচ ক’রে তাই করে দিলেন, ঘাট বাঁধিয়ে দিলেন। কিন্তু গাঁয়ের লোক সে পুকুর মাকে প্রতিষ্ঠা করতে দিলে না। অমন জল—কিন্তু কেউ খাবে না, ছোঁবে না, এম্নি বজ্জাত লোক। কেবল এই হিংসায় সবাই ম’রে যায় যে, আমাদের কোঠা তৈরী হ’ল! বুঝলেন না?
আমি আশ্চর্য্য হইয়া বলিলাম, বল কি হে? এই দারুণ জলকষ্ট ভোগ কর্বে, তবু অমন জল ব্যবহার কর্বে না?
বঙ্কু একটু হাসিয়া কহিল, তাই ত। কিন্তু সে কি বেশি দিন চলে? প্রথম বছর ভয়ে কেউ সে জল ছুঁলে না; কিন্তু এখন ছোটলোকেরা সবাই নিচ্চে, খাচ্চে—বামুন-কায়েতরাও চৈত্র-বৈশাখ মাসে লুকিয়ে জল নিয়ে যাচ্ছে—কিন্তু তবু, পুকুর প্রতিষ্ঠা কর্তে দিলে না—এ কি মায়ের কম কষ্ট?
আমি কহিলাম, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভাঙবার যে একটা কথা আছে, এ যে দেখি তাই।
বঙ্কু জোর দিয়া বলিয়া উঠিল, ঠিক তাই! এমন গাঁয়ে আলাদা একঘরে হয়ে থাকাই শাপে বর। আপনি কি বলেন? প্রত্যুত্তরে আমি শুধু হাসিয়া ঘাড় নাড়িলাম। হাঁ-না স্পষ্ট করিয়া কিছুই বলিলাম না। কিন্তু সেজন্য বঙ্কুর উদ্দীপনা বাধা পাইল না। দেখিলাম, ছেলেটি তাহার বিমাতাকে সত্যিই ভালবাসে। অনুকূল শ্রোতা পাইয়া ভক্তির আবেগে সে দেখিতে দেখিতে মাতিয়া উঠিল, এবং তাঁহার অজস্র স্তুতিবাদে আমাকে প্রায় ব্যাকুল করিয়া তুলিল।
হঠাৎ এক সময়ে তাহার হুঁস হইল যে, এতক্ষণের মধ্যে আমি একটি কথাতেও কথা যোগ করি নাই। তখন সে অপ্রতিভ হইয়া কোনমতে