হাকিমপুর উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
অসম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(৪ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৮টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
৫ নং লাইন: | ৫ নং লাইন: | ||
| চিত্রের_বিবরণ = উপজেলায় প্রবেশের রাস্তায় স্বাগতম বার্তা |
| চিত্রের_বিবরণ = উপজেলায় প্রবেশের রাস্তায় স্বাগতম বার্তা |
||
| চিত্র_মানচিত্র = Hakimpur in Rangpur division (Bangladesh).svg |
| চিত্র_মানচিত্র = Hakimpur in Rangpur division (Bangladesh).svg |
||
|চিত্র_মানচিত্রের_বিবরণ = মানচিত্রে হাকিমপুর উপজেলা |
| চিত্র_মানচিত্রের_বিবরণ = মানচিত্রে হাকিমপুর উপজেলা |
||
| স্থানাঙ্ক = {{স্থানাঙ্ক|25.28|N|89.01|E|region:BD|display=inline,title}} |
| স্থানাঙ্ক = {{স্থানাঙ্ক|25.28|N|89.01|E|region:BD|display=inline,title}} |
||
| স্থানাঙ্ক_পাদটীকা = |
| স্থানাঙ্ক_পাদটীকা = |
||
| বিভাগ = রংপুর বিভাগ |
| বিভাগ = রংপুর বিভাগ |
||
| জেলা = দিনাজপুর জেলা |
| জেলা = দিনাজপুর জেলা |
||
| উপজেলা = হাকিমপুর |
|||
| প্রতিষ্ঠার_শিরোনাম = |
| প্রতিষ্ঠার_শিরোনাম = |
||
| প্রতিষ্ঠার_তারিখ = |
| প্রতিষ্ঠার_তারিখ = |
||
| আসনের_ধরন = |
| আসনের_ধরন = |
||
| আসন = |
| আসন = |
||
| নেতার_দল = |
| নেতার_দল = |
||
| নেতার_শিরোনাম = |
| নেতার_শিরোনাম = |
||
| নেতার_নাম = |
| নেতার_নাম = |
||
| আয়তনের_পাদটীকা = |
| আয়তনের_পাদটীকা = |
||
| মোট_আয়তন = ৯৯.৭৯ |
| মোট_আয়তন = ৯৯.৭৯ |
||
৩১ নং লাইন: | ৩২ নং লাইন: | ||
| পাদটীকা = |
| পাদটীকা = |
||
}} |
}} |
||
'''হাকিমপুর উপজেলা''' বাংলাদেশের [[দিনাজপুর জেলা]]র অন্তর্গত একটি [[উপজেলা নির্বাহী অফিসার|উপজেলা]]। ১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিশের মাধ্যমে [[আলীহাট ইউনিয়ন|আলীহাট,]] [[বোয়ালদাড় ইউনিয়ন|বোয়ালদাড়]], [[খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন|খট্টামাধবপাড়া]] ও [[বিরামপুর উপজেলা|বিরামপুর]] সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষণা |
'''হাকিমপুর উপজেলা''' বাংলাদেশের [[দিনাজপুর জেলা]]র অন্তর্গত একটি [[উপজেলা নির্বাহী অফিসার|উপজেলা]]। ১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিশের মাধ্যমে [[আলীহাট ইউনিয়ন|আলীহাট,]] [[বোয়ালদাড় ইউনিয়ন|বোয়ালদাড়]], [[খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন|খট্টামাধবপাড়া]] ও [[বিরামপুর উপজেলা|বিরামপুর]] সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষণা করেন। |
||
== অবস্থান ও আয়তন == |
== অবস্থান ও আয়তন == |
||
৭৮ নং লাইন: | ৭৯ নং লাইন: | ||
এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা। |
এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা। |
||
হাকিমপুর উপজেলায় [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] দ্বিতীয় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] "'''পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড'''" অবস্থিত। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যাদি আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। এই সীমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত, যার নাম হিলি চেক |
হাকিমপুর উপজেলায় [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] দ্বিতীয় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] "'''পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড'''" অবস্থিত। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যাদি আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। এই সীমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত, যার নাম হিলি চেক পোষ্ট। বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার লোক এই পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়ত করে।<ref>জাতীয় তথ্য বাতায়ন</ref> |
||
== মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা == |
== মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা == |
||
৯৪ নং লাইন: | ৯৫ নং লাইন: | ||
হাকিমপুর উপজেলায় ২টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে [[ছোট যমুনা নদী]] এবং [[তুলসীগঙ্গা নদী|তুলসী গঙ্গা]] নদী।<ref name="নদীকোষ">ড. অশোক বিশ্বাস, ''বাংলাদেশের নদীকোষ'', গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫।</ref> |
হাকিমপুর উপজেলায় ২টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে [[ছোট যমুনা নদী]] এবং [[তুলসীগঙ্গা নদী|তুলসী গঙ্গা]] নদী।<ref name="নদীকোষ">ড. অশোক বিশ্বাস, ''বাংলাদেশের নদীকোষ'', গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫।</ref> |
||
এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] |
এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড এবং [[হিলি স্থল বন্দর, বাংলাদেশ|হিলি স্থল বন্দর]] অবস্থিত। এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। |
||
== যোগাযোগ ব্যবস্থা == |
== যোগাযোগ ব্যবস্থা == |
||
১০০ নং লাইন: | ১০১ নং লাইন: | ||
=== [[হিলি ট্রাজেডি দিবস]] === |
=== [[হিলি ট্রাজেডি দিবস]] === |
||
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনে একটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। |
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনে একটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। |
||
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৫ সালের ১৩ |
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হিলি রেলস্টেশনের ১ নং লাইনে দাঁড়িয়েছিল গোয়ালন্দ-পার্বতীপুরগামী ৫১১ নং লোকাল ট্রেন। কর্তব্যরত স্টেশন মাষ্টার ও পয়েন্টম্যানের দায়িত্বহীনতার কারণে ১ নং লাইনে ঢুকে পড়ে সৈয়দপুর-খুলনাগামী আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস। ভুল সংকেতের কারণে মুহুর্তেই দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে লোকাল ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ ৩ টি বগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন, স্থানীয় রেলওয়ে একতা ক্লাবের সদস্যসহ স্থানীয়রা নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। বেসরকারী ভাবে নিহতের সংখ্যা শতাধিক হলেও সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় ২৭ জন। |
||
পরদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী [[বেগম খালেদা জিয়া]] হিলিতে দুর্ঘটনা পরিদর্শনে আসেন। হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের উদ্যোগে দিনটিকে হিলি ট্রেন ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটিতে সাধারণত নিহতদের স্মরনে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ, ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গায়ে ব্যানার লাগানো, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। |
পরদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী [[বেগম খালেদা জিয়া]] হিলিতে দুর্ঘটনা পরিদর্শনে আসেন। হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের উদ্যোগে দিনটিকে হিলি ট্রেন ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটিতে সাধারণত নিহতদের স্মরনে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ, ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গায়ে ব্যানার লাগানো, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। |
||
১০৮ নং লাইন: | ১০৯ নং লাইন: | ||
== দর্শনীয় স্থান == |
== দর্শনীয় স্থান == |
||
হাকিমপুর উপজেলা প্রধান দর্শনীয় স্থান হচ্ছে [[বাংলাদেশ]] [[ভারত]] জিরো পয়েন্ট গেট বা হিলি সীমান্ত শূন্যরেখা। হাকিমপুরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] হিলি পোর্ট অবস্থিত। শহরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভও দর্শনীয় স্থান বলে বিবেচিত হয়। |
হাকিমপুর উপজেলা প্রধান দর্শনীয় স্থান হচ্ছে [[বাংলাদেশ]] [[ভারত]] জিরো পয়েন্ট গেট বা হিলি সীমান্ত শূন্যরেখা। হাকিমপুরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম [[স্থলবন্দর]] হিলি পোর্ট অবস্থিত। শহরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভও দর্শনীয় স্থান বলে বিবেচিত হয়। |
||
== গণমাধ্যম == |
|||
* সাপ্তাহিক হিলি বার্তা |
|||
* সাপ্তাহিক লাল সবুজ |
|||
* নোমান টিভি |
|||
* হিলি নিউজ ২৪ |
|||
* হিলি মিডিয়া |
|||
* জিরো পয়েন্ট |
|||
* বাংলাহিলি২৪.কম |
|||
* হিলি টাইমস২৪.কম |
|||
== আরও দেখুন == |
== আরও দেখুন == |
০৮:০৬, ২২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হাকিমপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে হাকিমপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৭′৩″ উত্তর ৮৯°০′৫৮″ পূর্ব / ২৫.২৮৪১৭° উত্তর ৮৯.০১৬১১° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | দিনাজপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৯৯.৭৯ বর্গকিমি (৩৮.৫৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৯২,৫৯৯ |
• জনঘনত্ব | ৯৩০/বর্গকিমি (২,৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৪.০৭% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫২৭০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ২৭ ৪৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
হাকিমপুর উপজেলা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিশের মাধ্যমে আলীহাট, বোয়ালদাড়, খট্টামাধবপাড়া ও বিরামপুর সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষণা করেন।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]এ উপজেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা ও বিরামপুর উপজেলা, দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলা, পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিরামপুর উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
[সম্পাদনা]হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন ৩টি ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
ক্রমিক | এলাকার নাম | ধরণ |
---|---|---|
০১ | হাকিমপুর পৌরসভা | পৌরসভা |
০২ | আলীহাট ইউনিয়ন | ইউনিয়ন |
০৩ | বোয়ালদাড় ইউনিয়ন | ইউনিয়ন |
০৪ | খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন | ইউনিয়ন |
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ভারত বর্ষ বিভক্ত হবার আগেই মুর্শিদাবাদের জমিদার মিনা কুমারী তাহার জমিদার অন্তর্গত একটি অঞ্চলের নাম ছিল বালুরঘাট। মিনা কুমারী ছিলেন ধনবতী–বিশাল সম্পদশালীনী। কিন্তু সম্পদের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তাহার জনবল ছিল অপ্রতুল। তাই তিনি তাহার কিছু সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিলেন। গদাধর মন্ডল তখন উঠতি ধনশালী ছিলেন। বহুদিনের বাসনা জমিদার হবেন। সুযোগও আসল দর পত্তনি হিসাবে মিনা কুমারীর নিকট হইতে তিনি ক্রয় করিলেন বালুঘাট থানার ৬টি মৌজা হাকিমপুর, ধরন্দা, মাকুরমুড়া, খোর্দ্দা-মাহসুল,বাসুদেবপুর ও আপ্তর। এসব কিছু তখন ছিল বগুড়া জেলার অধীন।
গদাঘরমন্ডল নিঃসন্তান হওয়ায় তাহার মৃত্যুর পর ভাতুস্পুত্র বেনী মাধব দাস একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পত্তির মালিক হন। বেণী মাধব দাসের কোন সন্তান না থাকায় তাহার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী কুঞ্জবালা দাস্যা জমিদারী প্রাপ্ত হন এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহাদের একমাত্র কন্যা বিধুবালা সরকার উক্ত সম্পত্তির মালিক হন।
ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদারী প্রথাও উচ্ছেদ হল। আর বালুরঘাট থানাও দুই ভাগে বিভক্ত হল। দুই অংশ দুই দেশের অন্তর্ভুক্ত হল। তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ভুক্ত এই অঞ্চলটি পার্শ্ববর্তী থানা নবাবগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হয়ে বগুড়া হতে দিনাজপুর জেলার অধীন হয়ে গেল। একে তো সীমান্ত এলাকা তার উপর থানা সদর হইতে দূর। ট্রেন ডাকাতি, গ্রামে-গঞ্জে চুরি ডাকাতি প্রভৃতি অরাজকতায় জন জীবন অতিষ্ঠ। প্রয়োজন দেখা দিল একটি পুলিশ ফাঁড়ীর তধানীন্তন পাক হিলি বাজারস্থ জনাব শফি মন্ডল সাহেবের চালকল গুদামে স্থাপিত হইল একটি পুলিশ ফাঁড়ী।
১৯৫০ সালের ২৫শে মার্চ হাকিমপুর ইতিহাসে এক স্মরনীয় ঘটনা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই দিনে বোয়ালদাড়, আলীহাট, খট্টামাধবপাড়া ও বিরামপুর সহ মোট ৪ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে হাকিমপুর মৌজার নামানুসারে হাকিমপুর থানা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২টি ইউনিয়ন যথা হিলি-হাকিমপুর ও কাটলা সৃষ্টির মাধ্যমে এই থানায় মোট ৬টি ইউনিয়ন হয়।
১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদার বিধুবালা সরকারের নিকট হতে তার বাসভবন সহ মোট ২৭৫ একর ৫৮৬৯.২০ টাকায় ক্রয় করেন এবং সেখানে থানার অফিস স্থানান্তরিত হয়। সৃষ্টির মুহুর্তে থানাটি মোটামুটি বড় থানা হিসাবে পরিচিতি ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে এই থানার ২ টি ইউনিয়ন কাটলা ও বিরামপুর নবগঠিত থানা বিরামপুরের অন্তভুক্ত হয়। ফলে উপজেলাটি বর্তমানে ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা উত্তর পশ্চিমে নবগঠিত বিরামপুর উপজেলা দক্ষিণে পাঁচবিবি উপজেলা পূর্বে ঘোড়াঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে পশ্চিম বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হিলি থানা।
বর্তমান হাকিমপুর উপজেলা ৬৯টি মৌজায় বিভক্ত। এই উপজেলায় বৈগ্রাম মৌজায় একটি বহু প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আছে। ছাতনী মৌজায় রয়েছে একটি প্রাচীন মসজিদের ধংসাবশেষ। একটি গীর্জার ধংসাবশেষ দেখা যায় লক্ষিকোল মৌজায়। অবিভক্ত ভারতে অত্র হাকিমপুর উপজেলা ধানের ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। এই এলাকায় ততকালে সবচেয়ে বড় আকারের ধান ভাংগানোর বয়লার মিল সহ বর্তমানে মোট ১৭টি ধান ভাঙানোর মিল আছে।
এই এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত। কোথাও কোথাও উঁচু অঞ্চল এখনো দেখা যায়। অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী। কৃষি ক্ষেত্রে ধান উৎপাদনের উপযোগীতা সবচেয়ে বেশি। আদি অধিবাসীগণ কৃষিকেই প্রধান জীবিকা হিসাবে এখনও টিকিয়ে রেখেছেন। এই উপজেলার মধ্য দিয়া তুলশী গঙ্গা ও যমুনা নদীর শাখা প্রশাখা বহমান।
এই উপজেলাই মোট ৬ ছয় মাইল ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা।
হাকিমপুর উপজেলায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর "পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড" অবস্থিত। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যাদি আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। এই সীমান্ত এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক চেক পোষ্ট অবস্থিত, যার নাম হিলি চেক পোষ্ট। বছরে প্রায় ৭-৮ হাজার লোক এই পথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়ত করে।[২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]মুক্তিযুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলা তথা হিলি গুরুত্ব অপরিসীম। হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশল গত কারণে পাকহানাদার বাহিনীর নিকট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এই অঞ্চল দখল করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে হানাদার বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩য় ইষ্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন এর আলফা কোম্পানী ও ছাত্র-জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রি-মুখি আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। তাদের প্রচন্ড আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্র-ভঙ্গ হয়ে ভারতের হিলির বকশীগঞ্জ আমবাগানে অবস্থান নেয়। এই যুদ্ধে ৩ ইষ্টবেঙ্গলের ৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। এই অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে চারিদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পাকিস্তানি বাহিনী ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কনক্রিটের ভাস্কর নির্মাণ করত: এখানে খুবই জোরালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনী সেনারা প্রায় পাশ্ববর্তী এলাকার নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বাঙ্গালীদেরকে ধরে এনে এখানে নির্মল নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনী সহ যৌথবাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাঁটি উৎখাত করার জন্য প্রচন্ড আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর গোলা বর্ষণ করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে পারেনি। বরং এই দিনে মিত্রবাহিনীর অনেক সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডিয়ারের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে এই হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়। মৃত্যুবরণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর সদস্যগনের আত্মত্যাগের প্রতি জাতীর শ্রদ্ধার নিদর্শণ স্বরুপ হিলি মুহাড়াপাড়ায় (বিজিবি বাসুদেবপুর ক্যাম্প সংলগ্ন) নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ সম্মুখ সমর।
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী হাকিমপুর উপজেলার জনসংখ্যা ৯২,৫৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৭,১৬২ জন এবং মহিলা ৪৫,৪৩৭ জন।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]হাকিমপুর উপজেলায় হাকিমপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ ও হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ নামক ০২ টি ডিগ্রী কলেজ, বাংলাহিলি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে ০১ টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ নামে ০১ টি বে-সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ৪৬ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ০৮টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে।
- বেসরকারি পাঠাগার - ১ টি
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]হাকিমপুর উপজেলায় ২টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে ছোট যমুনা নদী এবং তুলসী গঙ্গা নদী।[৩]
এখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড এবং হিলি স্থল বন্দর অবস্থিত। এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]হাকিমপুর থানা থেকে দক্ষিণ পাশে পাঁচবিবি হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা জয়পুরহাটে যোগাযোগ রয়েছে, হাকিমপুর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা শহর বগুড়া তে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে, হাকিমপুর উপজেলা শহর উত্তর পাশ দিয়ে বিরামপুর উপজেলা উপর দিয়ে দিনাজপুর জেলা শহর পর্যন্ত হাইওয়ে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে তাছাড়া হাকিমপুর থানায় একটি স্থলবন্দর থাকায় হাকিমপুর উপজেলার পশ্চিম দিক দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে, তাছাড়া এখানে একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট রয়েছে এবং হাকিমপুরের উপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর সুদীর্ঘ রেলপথ রয়েছে, যে রেলপথ দিয়ে ঢাকার সাথে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর রেল যোগাযোগ রয়েছে।
১৩ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনে একটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হিলি রেলস্টেশনের ১ নং লাইনে দাঁড়িয়েছিল গোয়ালন্দ-পার্বতীপুরগামী ৫১১ নং লোকাল ট্রেন। কর্তব্যরত স্টেশন মাষ্টার ও পয়েন্টম্যানের দায়িত্বহীনতার কারণে ১ নং লাইনে ঢুকে পড়ে সৈয়দপুর-খুলনাগামী আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস। ভুল সংকেতের কারণে মুহুর্তেই দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে লোকাল ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ ৩ টি বগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন, স্থানীয় রেলওয়ে একতা ক্লাবের সদস্যসহ স্থানীয়রা নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। বেসরকারী ভাবে নিহতের সংখ্যা শতাধিক হলেও সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয় ২৭ জন। পরদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হিলিতে দুর্ঘটনা পরিদর্শনে আসেন। হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের উদ্যোগে দিনটিকে হিলি ট্রেন ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটিতে সাধারণত নিহতদের স্মরনে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ, ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গায়ে ব্যানার লাগানো, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
খনিজ সম্পদ
[সম্পাদনা]সাম্প্রতিককালে হাকিমপুরে লৌহ খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। হাকিমপুরের ইসবপুর গ্রামে প্রায় ছয় বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে ২০১৯ সালে এটি আবিষ্কার করা হয়। খনিতে লোহার পাশাপাশি ক্রোমিয়াম, নিকেল উপস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এমনকি খনিটিতে স্বর্ণও পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]হাকিমপুর উপজেলা প্রধান দর্শনীয় স্থান হচ্ছে বাংলাদেশ ভারত জিরো পয়েন্ট গেট বা হিলি সীমান্ত শূন্যরেখা। হাকিমপুরে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিলি পোর্ট অবস্থিত। শহরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভও দর্শনীয় স্থান বলে বিবেচিত হয়।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- দিনাজপুর জেলা
- বিরামপুর উপজেলা
- ঘোড়াঘাট উপজেলা
- নবাবগঞ্জ উপজেলা
- জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া আনওয়ারুল উলুম
- হাকিমপুরে লৌহ খনি
- স্বপ্নপুরী
- সুজা মসজিদ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |