বিষয়বস্তুতে চলুন

ম্যাক ইউরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা 116.58.200.162 (আলোচনা) কর্তৃক ১২:১৩, ২৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

ম্যাক ইউরী
ম্যাক ইউরী, ২০১৫ সালে গৃহীত আলোকচিত্র
জন্মমোহাম্মদ আনোয়ারুল কামাল ইউরী
১৯৬৪
অন্য নামথান্ডার শিনম্যান, বজ্র মুনি (সুপার হিউম্যান)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শৈলীব্যুত্থান
পদবীবানদো-তে ৭তম ব্ল্যাক-বেল্ট
বুত্থান-এ ১০ম ব্ল্যাক বেল্ট
পেশামার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক
ওয়েবসাইটVajramunee.org

ম্যাক ইউরী (বজ্রমুনি নামেও পরিচিত) (জন্ম ১৯৬৪) বিশ্ব রেকর্ডধারী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পৃথিবীর একজন শীর্ষস্থানীয় মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টার। মনঃসংযোগ প্রশিক্ষণ, ধ্যান, প্রেরণাদায়ী বক্তা এবং আত্মরক্ষা কৌশল প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ম্যাক ইউরি বিশ্বের একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাস-বিরোধী কৌশল এবং নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও তার সুপরিচিতি রয়েছে। তিনি একজন লেখক ও দার্শনিক। এছাড়া তিনি বজ্রপ্রাণ এবং ব্যুত্থান ক্রীড়াদ্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা। বজ্রপ্রাণ এবং ব্যুত্থান দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্ভূত দুইটি প্রাচীণ আত্মরক্ষামূলক ক্রীড়া, যা শরীর-মনের ভারসাম্য বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে থাকে। তিনি তার অতিমানবীয় সিনবোন কিকের জন্য 'থান্ডার শিনম্যান' হিসেবে জগৎব্যাপী পরিচিতি ও প্রসংসা অর্জন করেন।[] পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্ঘাস্থি বা শিন-এর জন্যে এবং মস্তিস্কের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মনোনিবেশ অর্জনের তিনি ৪টি বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেছেন।[][]

ডিসকভারি চ্যানেল ২০১৩ সালে তাকে বিশ্বের অন্যতম বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী অতিমানব (বা সুপারহিউম্যান) হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ডিসকভারি চ্যানেল নিযুক্ত পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক ম্যাক ইউরীর এই অতিমানবীয় ক্ষমতা বিশ্লেষণ করে অভিহিত করেন যে তার পায়ের শক্তি বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।[] পরবর্তিতে ওয়েন ইউনিভার্সিটি আমেরিকা গবেষণা করে বের করে যে প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ড বেসবল ভাঙ্গতে ৭৪০ পাউন্ডস শক্তি প্রয়োজন। বৃটেনের নটিংহামের মেয়রের উপস্থিতিতে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস রেজিস্ট্রি অ্যাডজুডিকেটর জন ইভান্স আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কৃতি মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টারের হাতে বিশ্ব স্বীকৃতি সনদ হস্তান্তর করেন।[] তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মিক উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।[]

শৈশব ও বেড়ে উঠা

ম্যাক ইউরীর পিতার নাম শামসুল আলম এবং মায়ের নাম আমিনা আলম। শামসুল আলম ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী। সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনের নামানুসারে তার নাম রাখা হয় ইউরি। একাডেমিক নাম ‘মুহাম্মদ আনোয়ার কামাল’ এর ইংরেজি আদ্যক্ষরগুলো নিয়ে ‘ম্যাক’ এ রূপ নিয়েছে।[] শৈশবে এলিজাবেথ মার্বেল প্রাইমারি স্কুলের মাধ্যমে ম্যাক ইউরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণী থাকা অবস্থায় তিনি তার সহপাঠী ও বন্ধুদের সাথে একত্রে শারীরিক প্রশিক্ষণ বিষয়ক একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। শারীরিক প্রশিক্ষণের উপরে তিনি সেসময় একটি ছোট বই রচনা করেন, বইটি তিনি তার বন্ধুদের মাঝে বিতরণ করেন। এরপর তিনি বার্মিজ মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ বান্দো এবং মিনজিং বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কৈশোরে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি শৃঙ্খলা ও রণকৌশল বিষয়েও সম্যক জ্ঞান অর্জন করেন। নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তিনি সামরিক বিজ্ঞান বিষয়ক একটি সংস্থার সাথে জড়িত হন, পরবর্তিতে তিনি নিজেই 'সেলফ ডিফেন্স সোসাইটি' বা আত্মরক্ষা বিষয়ক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থায় তিনি শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষা, ধ্যান ও যোগশাস্ত্র বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। ক্যাডেট কলেজে থাকা অবস্থায় ম্যাক ইউরী প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি দেহতত্ব, যোগশাস্ত্র, মনলসংযোগ, সামরিক প্রশিক্ষণ, ব্যায়াম বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তিতে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ম্যাক ইউরীকে বিশিষ্ট ক্যাডেট হিসেবে সম্মাননা দেয়।

১৭ বছর বয়সে ম্যাক ইউরী নিজেই মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। মার্শাল আর্টস, ধ্যান, যোগশাস্ত্র এবং ভেষজ ঔষধ সম্পর্কে জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে পরবর্তিতে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।[]

মার্শাল আর্ট অনুশীলন

মিলিটারি সাইন্স, ফিজিক্যাল ট্রেনিং, অবস্টাকল কোর্স, আন আর্মড কমব্যাট, মিলিটারি ড্রিলস প্যারেডের মতো বিষয়সমূহে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এছাড়া ইউরি ভারতের কাঞ্চিপুরম ও চীনের শাওলিন টেম্পল সম্পর্কিত অনুসন্ধানী গবেষণার মাধ্যমে ভারতীয় মার্শাল আর্টের লুপ্তপ্রায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি 'ন্যাশনাল সিকিউরিটি একাডেমী' আমেরিকা থেকে কমিশন অফিসার্স কোর্স সমাপ্ত করেন। অর্জন করেন ব্রিটিশ হোম অফিস অধীনস্থ সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিজ অথরিটি ভিআইপি প্রটেকশনের ওপর সর্বোচ্চ প্রফেশনাল ডিগ্রি। এছাড়া ফায়ার ট্রেনিং একাডেমী ইংল্যান্ড থেকে ফায়ার মার্শাল কোর্সও সম্পন্ন করেন।[]

কর্মজীবন

ম্যাক ইউরী মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণের জন্য মায়ানমারে গমন করেন, সেখানে তিনি বার্মিজ মার্শাল আর্টস বান্দো এবং বানশে সম্বন্ধে হাতে-কলমে জ্ঞান লাভ করেন।[] ইউরী পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারতে কাঞ্চিপুরাম এবং চীনের শাওলিন টেম্পলে যান। এই দুই জায়গা থেকে তিনি মার্শাল আর্টসের অভ্যুথান বিষয়ে জানবার জন্য ঐতিহাসিক তথ্য সংবলিত তামিল ও চীনা ভাষার দলিলাদি ও পুস্তকের অনূদিত প্রতিলিপি সংগ্রহ করেন। ইউরী যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাকাডেমি থেকে কমিশনড অফিসার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। ব্রিটিশ হোম অফিসের তত্ত্বাবধানে তিনি ডিগনিটারী প্রটেকশন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এসআইএ-৩ যোগ্যতার সনদ লাভ করেন। ইউরী তার পেশাজীবন শুরু করেন আত্মরক্ষা কৌশল বিষয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সামরক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি কমব্যাট সেলফ ডিফেন্স উদ্ভাবন করেন। কমব্যাট সেলফ ডিফেন্স আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা।[] ইউরী বিস্ফোরক দ্রব্য অনুসন্ধান, সন্ত্রাস-বিরোধী পদ্ধতি, বিমান ব্যবস্থার নিরাপত্তা, সুউচ্চ ভবনের নিরাপত্তা, অফনি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।[] ইউরী এমওয়াই ব্যাটন নামের একটি কন্ট্রোল ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন, এটি নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কাজে ব্যবহৃত হয়। তিনি অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ ল এনফোর্সমেন্ট ট্রেইনারস-এর প্রশিক্ষক সদস্য।[][১০]

উপমহাদেশীয় মার্শাল আর্টসের হাজার বছরের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি দীর্ঘদিনধরে গবেষণা করছেন।[]

পুরস্কার

ম্যাক ইউরীর অর্জিত পুরস্কারসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পুরস্কার:[]

  1. ইয়ুথ ইন্সপারেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ – সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক
  2. ব্র্যান্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ – বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম
  3. মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং পারফর্মারস অ্যাওয়ার্ড ২০১১ – ইন্টারন্যাশনাল মার্শাল আর্টস এক্সিবিশন, ইউকে
  4. গ্র্যান্ড মাস্টার পিনাকল অ্যাওয়ার্ড ওয়ার্ল্ড – গ্র্যান্ড মাস্টার্স কাউন্সিল, ইউএসএ, ২০০৯
  5. গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্যা ইয়ার – লন্ডন মার্শাল আর্টস হল অফ ফেম, ইউকে, ২০০৯
  6. গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্যা ইয়ার – ওয়ার্ল্ড ব্ল্যাক বেল্ট মার্শাল আর্টস হল অফ ফ্রেম, মালয়েশিয়া, ২০০৮
  7. গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্যা ইয়ার – ইউনিভার্সাল মার্শাল আর্টস হল অফ ফেম, ইউএসএ, ২০০৭
  8. গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্যা ইয়ার – ওয়ার্ল্ড ব্ল্যাক বেল্ট মার্শাল আর্টস হল অফ ফ্রেম, ইউএসএ, ২০০৭

রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট-এ ম্যাক ইউরি

২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর ‘রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট- এর কমিক ভার্সনে ইউরির সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়। ঐ ভার্সনে কার্টুনের মাধ্যমে তার ছবি উল্লেখ করে লেখা হয়, "বাংলাদেশি মার্শাল আর্টস মাস্টার ম্যাক ইউরি; এক কিকে এক সাথে তিনটি স্টার্ন্ডাড সাইজের বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলতে পারেন।" [১১]

তথ্যসূত্র

  1. আজ বরিশালবাসীর 'ইত্যাদি, দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  2. "Dr Mak Yuree"। Record Holders Republic। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৫, ২০১৫ 
  3. "Shins of Steel: The Man Who Can Break Three Baseball Bats With A Super-Kick"। Ghana Reporters। জুলাই ২৬, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৬, ২০১৫ 
  4. "Bangladeshi martial artist Mak Yuree on Ripley's Believe It Or Not"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০১৫ 
  5. সুপার হিউম্যান ম্যাক ইউরি, বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ডিসেম্বর ৮, ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  6. "Martial arts expert offers hand of peace"। SwindonAdvertiser। সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৫, ২০১৫ 
  7. মার্শাল আর্ট গ্র্যান্ডমাস্টার ড. ম্যাক ইউরীর ঈদ ভাবনা, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুন ২০১৬
  8. Makee, Yuree (২০০৮), Dr Yuree Makee: An ancient answer to a modern day problem, Birmingham, United Kingdom: Combat Magazine, পৃষ্ঠা 19–21 
  9. "Who is Who in the International Combat Martial Arts: Dr. Yuree"। International Combat Martial Arts Unions Association। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৮, ২০১৫ 
  10. "Amazing World Record in Martial Arts Category at NEC, United Kingdom"। SportsHeadlines.com Inc। মে ২১, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৮, ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. এবার \\\'রিপ্লিস বিলিভ ইট অর নট\\\'-এ ম্যাক ইউরি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৪ ডিসেম্বর ২০১৩

বহিঃসংযোগ