বাপ্পী লাহিড়ী
বাপ্পি লাহিড়ী | |
---|---|
জন্ম | অলোকেশ লাহিড়ী ২৭ নভেম্বর ১৯৫২ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | (বয়স ৬৯)
পেশা | সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীত শিল্পী |
কর্মজীবন | ১৯৭২–২০২২ |
দাম্পত্য সঙ্গী | চিত্রানী লাহিড়ী |
সন্তান | রেমা লাহিড়ী বাপ্পা লাহিড়ী |
পিতা-মাতা |
|
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
উদ্ভব | কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত |
ধরন |
|
বাদ্যযন্ত্র | |
লেবেল | বিএল সাউন্ড, সারেগামা, টি-সিরিজ, ভেনাস রেকর্ডস এন্ড টেপস, টিপস ইন্ডাস্ট্রীজ, ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ |
ওয়েবসাইট | www |
অলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ী (২৭ নভেম্বর ১৯৫২ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)[১][২][৩] হিন্দী চলচ্চিত্র শিল্প-সহ বাংলা গানের গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।[৪] এছাড়াও, সঙ্গীত জগতে তিনি বাপ্পী-দা নামেও সমধিক পরিচিত। তিনি নিজের লিখিত অনেকগুলো গান স্বকণ্ঠে ধারণ করেছেন। ১৯৮০'র দশকের চলচ্চিত্র বিশেষ করে ডিস্কো ড্যান্সার, নমক হালাল এবং শরাবী'র ন্যায় বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি সমাদৃত হন।
শৈশবের দিনলিপি
[সম্পাদনা]বাপ্পী লাহিড়ি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম আলোকেশ বাপ্পী লাহিড়ি। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন একজন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁসুরী লাহিড়িও ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা যিনি শাস্ত্রীয় ঘরাণার সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরিবারেরই একমাত্র সন্তান বাপ্পী লাহিড়ি।
তিন বছর বয়সেই তবলা বাজাতে শুরু করেন। তার মায়ের আত্মীয় হিসেবে ছিলেন - বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার এবং এস. মুখার্জী। পিতা-মাতার সান্নিধ্যে থেকেই তিনি সঙ্গীতকলায় হাতে খড়ি ও প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]বাপ্পী লাহিড়ী বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। সংসারে তার স্ত্রী - চিত্রাণী, কন্যা - রিমা এবং পুত্র - বাপ্পা রয়েছে। তিনি অলঙ্কারের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ।সাধারণত তাকে পোশাকের সাথে স্বর্ণের অলঙ্কার এবং কালো চশমা পরিধান করতে দেখা যায়। সংগীত শিল্পী কিশোর কুমার সম্পর্কে তার মামা।
সঙ্গীত জীবন
[সম্পাদনা]বাপ্পী লাহিড়ি ১৯ বছর বয়সে মুম্বইয়ে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে তিনি প্রথম গীত রচনা করেন। এরপর তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এতে তিনি গীত রচনাসহ গায়কের দ্বৈত ভূমিকায় অংশ নেন। অসম্ভব কিছু নয় শিরোনামে মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের সঙ্গেও দ্বৈত সঙ্গীতে অংশ নেন। তার পরের চলচ্চিত্র হিসেবে চালতে চালতে ছবিটির গানও দর্শক-শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রবিকান্ত নাগাইচের সুরক্ষা ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।
মিঠুন চক্রবর্তী'র ডিস্কো নাচের চলচ্চিত্রগুলোতে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০'র দশকে মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাপ্পী লাহিড়ী একসাথে বেশ কিছু ভারতীয় ডিস্কো চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এছাড়াও, তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে পরিচালিত অনেক হিন্দী চলচ্চিত্রের গানে অংশ নিয়েছেন। সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি নিজেকে 'ডিস্কো কিং' নামে পরিচিতি লাভে সমর্থ হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাপ্পী ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে ১৯৯০'র দশকে দূরে সরে যান। প্রকাশ মেহরা'র 'দালাল' ছবিতে স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে আসেন।
গানের ধাঁচ
[সম্পাদনা]বাপ্পী লাহিড়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রে ও ভারতীয় ধাঁচে ডিস্কো সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। তার রচিত গানগুলো কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে'র নৈপথ্য কণ্ঠ সঙ্গীতের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের পর্দায় এসেছে। বিজয় বেনেডিক্ট এবং শ্যারন প্রভাকরকেও তিনি সঙ্গীত শিল্পে অভিষেক ঘটান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এছাড়াও তিনি আলিশা চিনয় এবং ঊষা উথুপের সঙ্গেও কাজ করেন।
সঙ্গীত পরিচালনা
[সম্পাদনা]বাপ্পী রচিত সঙ্গীতগুলো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, এক বার কহো (১৯৮০); সুরক্ষা; ওয়ারদাত; আরমান; চলতে চলতে; কমাণ্ডো; ইলজাম; পিয়ারা দুশমন; ডিস্কো ড্যান্সার; ড্যান্স ড্যান্স; ফিল্ম হি ফিল্ম; সাহেব; টারজান; কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি; ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ; গুরু; জ্যোতি; নমক হালাল; শরাবী (১৯৮৫: ফিল্মফেয়ার সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার); এইতবার; জিন্দাগী এক জুয়া; হিম্মতওয়ালা; জাস্টিস চৌধুরী; নিপ্পু রাব্বা; রোদী ইন্সপেক্টর; সিমহাসনম; গ্যাং লিডার; রৌদী অল্লাদু; ব্রহ্মা; হাম তুমহারে হ্যায় সনম এবং জখমী।
এছাড়াও তিনি মালায়ালম চলচ্চিত্র (কেরালা) দ্য গুড বয়েজ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী
[সম্পাদনা]এছাড়াও, বাপ্পী লাহিড়ী নিজের লিখিত বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে অন্যতম,
রহি হু মে (ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ); বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত (আপ কি খাতির); মৌসম হ্যায় গানে কা (সুরক্ষা); তুম জো ভি হো (সুরক্ষা); তু মুঝে জান সে ভি পিয়ার হ্যায় (ওয়াদাত); ইয়াদ আ রাহা হ্যায় (ডিস্কো ড্যান্সার); সুপার ড্যান্সার (ড্যান্স ড্যান্স); দেখা হ্যায় ম্যায়নে তুমহে ফির সে পলাতকে (ওয়ারদাত); দিল মে হে তুম (সত্যমেব জয়তে); জে লা লা (টারজান); বাম্বাই নাগারিয়া (ট্যাক্সি নং ৯২১১)
হিন্দী চলচ্চিত্রে ডিস্কো ঘরণার গীত প্রচলনের পূর্বে তিনি বেশকিছু চীরস্মরণীয় গান রচনা করেছেন। সেগুলো হলো -
চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা; দিল সে মিলে দিল, দিল সে মিলে দিল (দিল সে মিলে দিল); মুসকুরাতা হুয়া (লাহো কে দো রং); চার দিন কি জিন্দেগী হ্যায় (এক বার কাহো); ধীরে ধীরে সুবহ হুয়ে (হৈসিয়াত); মান হো তুম (তুতে খিলোনে); তেরী ছোটি সি ভুল (শিক্ষা); ইয়ে নায়না ইয়ে কাজল (দিল সে মিলে দিল); গাও মেরে মন (আপনে পরায়ে); পিয়া হি জিনে কি (আরমান); পিয়ার মাঙ্গা হ্যায় তুমহি সে; কে পাগ ঘুঙ্গরাও বান্ধ মিরা নাচি থি।
শুধুমাত্র ডিস্কো সঙ্গীতের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাপ্পী লাহিড়ী। বেশ কিছু গজল গানও রচনা করেছেন তিনি। কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভি হ্যায় (এইতবার); আওয়াজ দি হিয়া (এইতবার) তার মধ্যে অন্যতম।
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী ২০২১ খ্রিস্টাব্দে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকে তার শরীর ভাল ছিল না। বেশ কিছুদিন তিনি মুম্বইয়ের জুহুতে সিটিকেয়ার হাসপাতালে ভরতি ছিলেন। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাত্রি ১১টা ৪৫ মিনিটে ৬৯ বৎসর বয়সে মুম্বইয়ের হাসপাতালে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে পরলোক গমন করেন। [৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বাপ্পী লাহিড়ী মারা গেছেন"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০২-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৩।
- ↑ "বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই"। Bangla Tribune। ২০২২-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৩।
- ↑ "চলে গেলেন কিংবদন্তি গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী"। দৈনিক যুগান্তর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৩।
- ↑ মিউজিক.এভারগ্রীণবাংলা.কমে বাপ্পী লাহিড়ী, সংগ্রহঃ ২২ নভেম্বর, ২০১১ইং[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "প্রয়াত কিংবদন্তি বাপ্পি লাহিড়ী, শিল্পী মহলে শোকের ছায়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৬।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ১৯৫২-এ জন্ম
- ২০২২-এ মৃত্যু
- ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী
- ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার
- ২১শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার
- কলকাতার সঙ্গীতজ্ঞ
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার
- তেলুগু চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার
- ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিবিদ
- ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রাপক
- বাঙালি গীতিকার
- ২০১৪-এ ভারতের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী
- পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিবিদ
- বাংলা চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার