বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া জেলা
বিষ্ণুপুর মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর | |
---|---|
পৌরশহর | |
ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°০৪′৩০″ উত্তর ৮৭°১৯′০১″ পূর্ব / ২৩.০৭৫° উত্তর ৮৭.৩১৭° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | বাঁকুড়া |
বিষ্ণুপুরের প্রতিষ্ঠা | ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | জগৎ মল্ল |
নামকরণের কারণ | বিষ্ণু |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | সৌমিত্র খাঁ |
আয়তন | |
• মোট | ২২ বর্গকিমি (৮ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৭০ মিটার (২৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৭৫,০০০ |
• জনঘনত্ব | ৩,৪০০/বর্গকিমি (৮,৮০০/বর্গমাইল) |
বিশেষণ | বিষ্ণুপুরবাসি |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমান সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭২২১২২ |
দূরাভাষ | +৯১ ৩২২৪ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | আইএসও ৩১৬৬-২:আইএন |
যানবাহন নিবন্ধন | ডাব্লিউ বি-৮৮ |
লোকসভা কেন্দ্র | বিষ্ণুপুর |
বিধানসভা কেন্দ্র | বিষ্ণুপুর |
ওয়েবসাইট | bishnupurmunicipality bankura |
বিষ্ণুপুর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মল্লরাজবংশের শাসনাধীনে
[সম্পাদনা]খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত প্রায় এক সহস্রাব্দ কাল বিষ্ণুপুরের ইতিহাস হিন্দু মল্ল রাজবংশের উত্থান ও পতনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।[১]
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রমেশচন্দ্র দত্ত লিখেছেন, "বিষ্ণুপুরের প্রাচীন রাজবংশের সূচনা সেই সময় ঘটে যখন দিল্লিতে হিন্দু রাজবংশ শাসন করত। সেই সময় ভারতের কেউ মুসলমান সম্প্রদায়ের নাম শোনেনি। বখতিয়ার খিলজি হিন্দু রাজাদের হাত থেকে বাংলার শাসন অধিকার করে নেওয়ার আগে পাঁচ শতাব্দীকাল এই রাজবংশ বিষ্ণুপুর শাসন করেছিল। যদিও, বাংলায় মুসলমান বিজয় বিষ্ণুপুর রাজাদের শাসনের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনেনি... বাংলার উর্বর অংশের মুসলমান শাসকেরা এই অরণ্যরাজ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন না। তারা এই অঞ্চলে কখনও আসেনওনি। এই কারণে, শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল বিষ্ণুপুরের রাজারা নির্বিঘ্নে শাসনকাজ চালিয়ে যান। পরবর্তীকালে অবশ্য মুঘল রাজশক্তি এই অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। মাঝে মাঝে মুঘল বাহিনী বিষ্ণুপুরের নিকটে এসে রাজস্ব দাবি করত এবং সম্ভবত বিষ্ণুপুরের রাজারা রাজস্ব দিয়েও দিতেন। মুর্শিদাবাদের সুবাদারেরা পরবর্তীকালের বীরভূম ও বর্ধমানের রাজাদের মতো বিষ্ণুপুরের রাজাদেরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্পূর্ণ সক্ষম হননি। বর্ধমান রাজাদের শক্তিবৃদ্ধি হওয়ার পর বিষ্ণুপুর রাজবংশের অবক্ষয় শুরু হয়। মহারাজা কীর্তিচাঁদ বিষ্ণুপুর আক্রমণ করে এই অঞ্চলের একটি বিস্তৃর্ণ অঞ্চল নিজ জমিদারির অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্গী হানার সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুপুর রাজবংশের পতন সম্পূর্ণ হয়। বর্তমানে এইটি দরিদ্র জমিদার পরিবার মাত্র।"[২]
বিষ্ণুপুর রাজাদের উৎস রহস্যাবৃত। বহু শতাব্দীকাল তাদের বাগদি রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বিষ্ণুপুরের রাজারা এবং তাদের অনুগামীরা দাবি করেন যে তারা উত্তর ভারতের ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভুত। এই অঞ্চলের আর্যীকরণের শেষ পর্যায়ে এই দাবি বিশেষ জোরালো হয়ে ওঠে। বিষ্ণুপুরের রাজারা মল্ল রাজা নামে পরিচিত। সংস্কৃত মল্ল শব্দটির অর্থ মল্লযোদ্ধা। তবে এই শব্দটির সঙ্গে এই অঞ্চলের মাল উপজাতির সম্পর্ক থাকাও সম্ভব। এই উপজাতির সঙ্গে বাগদিদের সম্পর্ক বিদ্যমান।[১]
বিষ্ণুপুর-সংলগ্ন অঞ্চলটিকে অতীতে মল্লভূম বলা হত। মল্লভূম রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল বর্তমান বাঁকুড়া থানা এলাকা (ছাতনা বাদে), ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর ও ইন্দাস। তবে প্রাচীন বিষ্ণুপুর রাজ্যের আয়তন আরও বড়ো ছিল। উত্তরে সাঁওতাল পরগনার দামিন-ই-কোহ থেকে এই রাজ্য দক্ষিণে মেদিনীপুর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। পূর্বে বর্ধমানের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমে ছোটোনাগপুরের একটি অঞ্চলও এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মল্ল রাজারা এই সব অঞ্চলও মল্লভূমের অধিকারে আনেন।[১]
আদিমল্ল
[সম্পাদনা]আদিমল্ল ছিলেন মল্ল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। এই রাজবংশের সূচনা সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। ৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এক রাজপুত্র পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে তীর্থ করতে যাচ্ছিলেন। তিনি কোতুলপুর থেকে ৮.৪ কিলোমিটার (৫.২ মাইল) দূরে লাউগ্রামের গভীর অরণ্যে তাঁবু ফেলেন। সেখানেই তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে এক ব্রাহ্মণের তত্ত্বাবধানে রেখে যান। রাজার স্ত্রী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এবং তারা লাউগ্রামেই থেকে যান। সাত বছর বয়সে ছেলেটি রাখালের কাজ শুরু করে। তবে অল্প বয়স থেকে তার মধ্যে নেতাসুলভ ভাব লক্ষিত হতে দেখা যায়। সে যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষিত হয়। মাত্র পনেরো বছর বয়সেই সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মল্লযোদ্ধা হয়ে ওঠে। এই কারণে সে আদিমল্ল (আদি বা অদ্বিতীয় মল্লযোদ্ধা) নামে পরিচিত হয়। বড়ো হয়ে আদিমল্ল লাউগ্রাম থেকে ১২.৮ কিলোমিটার (৮ মাইল) দূরে অবস্থিত জয়পুরের নিকটস্থ পদমপুরের রাজার কাছ থেকে লাউগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের আধিপত্য অর্জন করেন। এই কাহিনির সত্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও, বিষ্ণুপুরের রাজাদের সঙ্গে ক্ষত্রিয় বংশের সংযোগ নিয়ে এই রকম একাধিক কাহিনি মল্লভূমে প্রচলিত ছিল।[১] আদিমল্ল ৩৩ বছর লাউগ্রাম শাসন করেন এবং বাগদি রাজা নামে অভিহিত হন। তার পুত্র জয়মল্ল রাজা হয়ে পদমপুর আক্রমণ করে দুর্গ অধিকার করেন। জয়মল্ল তার রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়ে বিষ্ণুপুরে রাজধানী সরিয়ে আনেন। পরবর্তী রাজারাও রাজ্যবিস্তারে মন দিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চতুর্থ রাজা কালুমল্ল, ষষ্ঠ রাজা কাউমল্ল ও সপ্তম রাজা ঝাউমল্ল। অষ্টম রাজা সুরমল্ল উত্তর মেদিনীপুরের বাগড়ির রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। তার পরে আরও ৪০ জন বিষ্ণুপুর শাসন করেন। এঁরা সকলেই মল্ল বা মল্লবনিনাথ নামে পরিচিত ছিলেন। এই রাজাদের পারিবারিক নথি থেকে জানা যায়, এঁরা বিদেশি শাসনের অধীনতাপাশ থেকে মুক্ত ছিলেন।[১]
হাম্বীর মল্ল দেব (বীর হাম্বীর)
[সম্পাদনা]মল্ল রাজবংশের ৪৯তম শাসক বীর হাম্বীর ১৫৮৬ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সমসাময়িক। আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি আকবরের পক্ষাবলম্বন করেন। তিনি বাংলার সুবাদারের নিকট বার্ষিক রাজস্ব প্রদান করতেন এবং মুঘল সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেন।[১] বীর হাম্বীর ছিলেন শক্তিশালী ও ধার্মিক রাজা। শ্রীনিবাস আচার্য তাকে বৈষ্ণবমতে দীক্ষিত করেন। নরোত্তম দাস (ওরফে বলরাম দাস) রচিত প্রেমবিলাস ও নরহরি চক্রবর্তী রচিত ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, শ্রীনিবাস ও অন্যান্য ভক্তেরা বৃন্দাবন থেকে গৌড় যাত্রাপথে হাম্বীর কর্তৃক লুণ্ঠিত হন। কিন্তু শ্রীনিবাসের ভাগবত পাঠ শুনে তিনি বৈষ্ণবধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং শ্রীনিবাসকে প্রচুর অর্থ ও ভূসম্পত্তি দান করেন।[১]
রঘুনাথ সিংহ
[সম্পাদনা]বীর হাম্বীরের পুত্র রঘুনাথ সিংহ বিষ্ণুপুরের প্রথম রাজা যিনি ক্ষত্রিয় সিংহ উপাধি ব্যবহার করেন। কথিত আছে, এই উপাধি মুর্শিদাবাদের নবাব তাকে প্রদান করেছিলেন। তার রাজত্বকাল থেকেই বিষ্ণুপুর রাজ্যের স্বর্ণযুগের সূচনা ঘটে। রঘুনাথ সিংহের আমলে বিষ্ণুপুরে নয়নাভিরাম প্রাসাদ ও মন্দিরাদি নির্মিত হয়। যদিও, রাজনৈতিকভাবে বিষ্ণুপুর এই সময় তার স্বাধীনতা হারিয়ে অনেকটাই করদ রাজ্যের পর্যায়ে পর্যবসিত হয়।[১]
বীর সিংহ
[সম্পাদনা]১৬৫৬ সালে বীর সিংহ বর্তমান দুর্গ ও লালজি মন্দির নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি লালবাঁধ, কৃষ্ণবাঁধ, গনতাতবাঁধ, যমুনাবাঁধ, কালিন্দীবাঁধ, শ্যামবাঁধ ও পোকাবাঁধ নামে সাতটি বড়ো জলাধারও নির্মাণ করেন। ১৬৬৫ সালে তার মহিষী শিরোমণি বা চূড়ামণি মদনমোহন ও মুরলিমোহন মন্দিরদুটি নির্মাণ করেন। [১]
দুর্জন সিংহ
[সম্পাদনা]১৬৯৪ সালে দুর্জন সিংহ মদনমোহন মন্দির নির্মাণ করেন। পারিবারিক নথি অনুযায়ী, বিষ্ণুপুরের রাজারা মুসলমান শাসকদের রাজস্ব প্রদান করলেও, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা স্বাধীনই ছিলেন। মুসলমান ঐতিহাসিকেরাও এই ব্যাপারে একই কথা লিখছেন। বিষ্ণুপুরের রাজারা করদ রাজা হলেও, মুর্শিদাবাদের দরবারে তাদের উপস্থিত থাকতে হত না। তবে মুর্শিদাবাদে তাদের একজন রাজপ্রতিনিধি থাকতেন।[১]
গোপাল সিংহ
[সম্পাদনা]গোপাল সিংহ (১৭৩০-১৭৪৫) ছিলেন ধার্মিক রাজা। কিন্তু রাজ্যে সমাগত বিপদের মোকাবিলা করার শক্তি তার ছিল না। ১৭৪২ সালে ভাস্কর রাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠারা বিষ্ণুপুর আক্রমণ করলে, তার বাহিনী কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। গোপাল সিংহ সেনাবাহিনীকে দুর্গের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেন ও দুর্গ সুরক্ষিত করেন। তিনি নগরবাসীকে মদনমোহনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেন। কথিত আছে, মদনমোহন সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দলমাদল কামান মানুষের সহায়তা বিনাই নাকি গর্জে উঠেছিল। সম্ভবত মারাঠারা কঠিন দুর্গপ্রাকার ধ্বংস করতে না পেরে ফিরে গিয়েছিলেন। মারাঠারা এরপর রাজ্যের অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে লুটতরাজ চালায়। ১৭৬০ সালে দ্বিতীয় শাহ আলমের যুদ্ধাভিযানের কালে মারাঠা সর্দার শেওভাট বিষ্ণুপুরকে সদর করেছিলেন। মারাঠারা বিষ্ণুপুর ও বীরভূমের সীমান্ত অঞ্চলে এমন ভয়াবহ লুণ্ঠন চালান যে, এই একদা-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলি জনবিরল হয়ে পড়ে।[১]
চৈতন্য সিংহ
[সম্পাদনা]চৈতন্য সিংহও ধার্মিক রাজা ছিলেন। কিন্তু তাকেও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তিনি ধর্মকর্ম নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতেন যে, প্রশাসনিক কাজকর্ম কিছুই দেখতেন না। এরই সুযোগ নিয়ে দামোদর সিংহ নামে তার এক জ্ঞাতিভাই ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। প্রথমে সিরাজদ্দৌলা তাকে নিজ বাহিনী ধার দেন। কিন্তু তিনি বিষ্ণুপুর দখলে অসমর্থ হন। ইংরেজদের হাতে সিরাজের পরাজয়ের পর মীর জাফর দামোদর সিংহকে আরও শক্তিশালী বাহিনী ধার দেন। এইবার তিনি বিষ্ণুপুর দখল করতে সমর্থ হন। চৈতন্য সিংহ মদন গোপালের বিগ্রহ নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে আসেন। এরপর রাজ্যের মালিকানা নিয়ে বহুদিন মামলা মোকদ্দমা চলে। এই মামলা চালাতে গিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ পরিবারের পতন সম্পূর্ণ হয়। শেষে ১৮০৬ সালে রাজস্ব বাকি রাখার দায়ে রাজ্য বিক্রি হয়ে যায় এবং বর্ধমানের রাজা সমগ্র এস্টেটটি কিনে নেন।[১]
ভৌগোলিক উপাত্ত
[সম্পাদনা]শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°২৩′ উত্তর ৮৮°১৬′ পূর্ব / ২২.৩৮° উত্তর ৮৮.২৭° পূর্ব।[৩] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৫৯ মিটার (১৯৪ ফুট)।
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুসারে বিষ্ণুপুর শহরের জনসংখ্যা হল ৬১,৯৪৩ জন।[৪] এর মধ্যে পুরুষ ৫০% এবং নারী ৫০%। এখানে সাক্ষরতার হার ৬৯%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৭% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬১%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে বিষ্ণুপুর এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ১১% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
ভাষা
[সম্পাদনা]বিষ্ণুপুর শহরের প্রধান ভাষা বাংলা, ৯০ শতাংশের বেশি অধিবাসীর মাতৃভাষা বাংলা।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]স্থাপত্য
[সম্পাদনা]সঙ্গীত
[সম্পাদনা]উৎসব
[সম্পাদনা]বিষ্ণুপুর মেলা খুব বিখ্যাত। যা প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে রাজ দরবারে অনুষ্ঠিত হত। পরে হাইস্কুলের মাঠে এবং তারপর এটি নন্দলাল মন্দিরের কাছে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২০১৮ সালে বিষ্ণুপুর মেলা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে। যার পটভূমিতে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলো রাখা হয়। বিষ্ণুপুর মেলার উদ্বোধন করেছিল বিষ্ণুপুর ঘরানার কয়েকজন নামী ব্যক্তি তাদের সংগীত দিয়ে। ২০১৮ সালে বালুচরী শাড়ির একটি ফ্যাশন শো আয়োজন করা হয়েছিল।এতে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বালুচরী শাড়ির প্রচারের চালানো হয়েছিল। কারিগররা মেলার স্টল থেকে কারুশিল্প বিক্রি করে বিপুল উপার্জন পান।বিষ্ণুপুরের সাম্প্রতিক সংযোজন হ'ল বিষ্ণুপুর উৎসব ।এটি মেলার পর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগীতের 'বিষ্ণুপুর ঘরানা' এর ধ্রুপদী সংগীত উৎসব এবং নৃত্য উৎসব হয়। এটি ২০১২ সালের পরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটি ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাসমঞ্চ এ আবার শুরু হয়।[৫] এখানে আগস্টে একটি সাপের উৎসব, উল্টোরথ হয়। এছাড়াও এখানে দুর্গা পূজা এবং কালী পূজা বা দীপাবলী উদ্যাপন করা হয়। রাজবাড়ী দুর্গা পূজা (মৃন্ময়ী মা) এর পূজা ও জনপ্রিয়।যা ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল। এটি আজকে বাংলাদেশ, ওড়িশা ও ত্রিপুরা সহ সমগ্র বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনতম দুর্গাপূজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উৎপাদিত সামগ্রী
[সম্পাদনা]একদা মল্লভূম নামে পরিচিত এই শহর কুটির শিল্প ও হস্তশিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এই শহরে বেশকিছু পুরাতন শিল্প আজও তাদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রেখেছে।এমনি কিছু শিল্প হল - 'দশাবতার তাস', পোড়ামাটির নানান রকম শিল্পকর্ম, নারকেল খোলার দ্রব্য, শাঁখের গহনা, ঘর সাজাবার দ্রব্য, মাটির প্রতিমা, মাটির 'হিংগলি পুতুল','বর-বউ' পুতুল, মাটির ও কাঠেরপুতুল, শোলার টোপর, প্রতিমার সাজ, বেল খোলার মালা, সুন্দর কারুকার্য করা ঘট, বাটি ও লন্ঠন আরো অনেক জিনিস। শাঁখের দ্রব্য প্রধানত বানানো হয় শাঁখারিবাজার পাড়াতে।এছাড়া ' দশাবতার তাস ' ও এই পাড়ার ফোওজদার পরিবারের নিজস্ব শিল্প। গোপালগঞ্জ এলাকা, স্টেশনরোড ইত্যাদি অঞ্চলের লন্ঠন শিল্পীদের অসাধারণ লন্ঠন শিল্প আজও লোকদের বিস্মিত করে। পিতলের বাসন শিল্পও বিষ্ণুপুরের একটি পরিচায়ক, এছাড়া বিষ্ণুপুরের জগদ্বিখ্যাত বালুচরি শাড়িতো আছেই।
চিত্রপ্রদর্শনী
[সম্পাদনা]-
পোড়া ইঁটে তৈরি বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চর ভিতর অলিন্দ।
-
কালাচাঁদ মন্দির
-
জোড়বাংলা
-
রাধাগোবিন্দ মন্দির
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 21-46, 1995 reprint, Government of West Bengal
- ↑ Dutt, R.C., The Aboriginal Element in the Population of Bengal, Calcutta Review, 1882, quoted by O’Malley, p. 21
- ↑ "Bishnupur"। Falling Rain Genomics, Inc। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৬।
- ↑ "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি"। Archived from the original on ২০০৪-০৬-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৬।
- ↑ "West Bengal Tourism"। web.archive.org। ২০১৫-০৯-০৯। Archived from the original on ২০১১-১০-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৬।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |