দণ্ডকারণ্য রামায়ণোল্লিখিত বিশাল এক অরণ্যময় অঞ্চল যা মূলতঃ মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশমহারাষ্ট্র এই চারটি রাজ্য ব্যাপী বিস্তৃত। এর মোট আয়তন ২০৭১২০ বর্গ কিলোমিটার।[] ১৯৫৭ সালে ভারত সরকারের পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে মধ্যপ্রদেশের বস্তার জেলা এবং উড়িষ্যার কোরাপুট ও কালাহান্ডি জেলা নিয়ে দণ্ডকারণ্য-পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। এই পরিকল্পনার প্রধানত দুটি উদ্দেশ্য ছিল- এক. পুর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসন ; আর দুই. স্থানীয় আদিবাসী উপজাতিগুলির সর্বাঙ্গীণ উন্নতি বিধান করা। কলকাতা হতে ৮২৯ কিলোমিটার হাওড়া-নাগপুর রেলপথে অবস্থিত রায়পুর অথবা ৮১৯ কিলোমিটার দূরে হাওড়া-ওয়ালটেয়ার রেলপথে অবস্থিত ভিজিয়ানাগ্রাম থেকে সড়কপথে দণ্ডকারণ্যে আসা যায়। ১৯৫৮ সালে গঠিত দণ্ডকারণ্য ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-নামক সংস্থাটির হাতে এর গঠন ও পরিকল্পনা রূপায়নের দায়ভার অর্পণ করা হয়। এই প্রকল্পের সদর কার্যালয়টি উড়িষ্যা রাজ্যের কোরাপুট শহরে নির্ধারণ করা হয়। প্রায় ১৬০০০ হেক্টর বনভূমি উদ্ধার করে শরণার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।[]

/Bastar division covers bottom three districts (named Kanker, Bastar and Dantewada) in this old 2007 map of Chhattisgarh, since then these 3 districts have been divided into more districts

ভৌগোলিক পরিমণ্ডল

সম্পাদনা

পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি বিরাট অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্থানটি পর্বতময় ও দুর্গম। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একাধিক নদী প্রবাহিত হয়েছে; মছকুন্দ বা মৎস্যকুণ্ড, শবরী, ইন্দ্রাবতী, বংশধারা, নাগবল্লী প্রভৃতি তাদের অন্যতম। এখানকার জলবায়ু শুষ্ক ও স্বাস্থ্যকর। একসময় এই অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদূর্ভাব ছিল কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে তা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় প্রায় ১৫৬০ মিলিমিটার। এখানকার পার্বত্যময় বনভূমিতে আমলকী, হরিতকী, মহুয়া, শাল, সেগুন প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায়। এখানকার কাঠ ও বনজ সম্পদ স্থানান্তরে রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

জনবসতি

সম্পাদনা

অরণ্যময় প্রকৃতির কারণে এখানকার জনঘনত্ব বেশ কম; অধিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী-উপজাতি, এছাড়া পূর্ববঙ্গ থেকে আগত বহু শরণার্থী এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন; তাই এই অঞ্চলে বাংলা ভাষার প্রভাবও যথেষ্ট। এদের নিজেদের মধ্যে নানাপ্রকার ভাষার ব্যবহার আছে। উড়িষ্যা অঞ্চলের আদিবাসীদের ভাষা যেমন ওড়িয়া তেমনি মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের ভাষা হল হিন্দি। সাক্ষরতার হার বেশ কম; বর্তমানে বুনিয়াদী ও কারিগরী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার কিছুটা বিস্তার ঘটানো সম্ভব হয়েছে।

কৃষিজ ও খনিজ সম্পদ

সম্পাদনা

কৃষিজ সম্পদের মধ্যে ধান, ভুট্টা, সরিষা, তিসি প্রধান। নদী উপত্যকায় কৃষিজ ফসলের বেশিরভাগটাই উৎপাদিত হয়; আদিবাসীরা সাধারণতঃ জুমচাষে অভ্যস্ত। তবে বর্তমানে স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে আদিবাসীরা আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চল খনিজ সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ। কোরাপুট জেলার চুনাপাথর, অভ্র, আকরিক লোহা ;কালাহাণ্ডি জেলার বক্সাইট ও ম্যাঙ্গানিজ এবং বস্তার জেলার বাইলাডিলার লৌহসম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অ্যাজবেস্টস, তামা, ইলমেনাইট, মোনাজাইট প্রভৃতি খনিজদ্রব্যের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এখানে জলবিদ্যুৎ সম্পদও প্রচুর আছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. National Council of Applied Economic Research, Development of Dandakaranya, New Delhi, 1963;
  2. Census of India 1961, Orissa, Distric Census Handbook: Koraput Distric, Vol.II, Cuttak, 1965;