আখ্যান
গল্প
[সম্পাদনা]গল্প হল স্বল্প দৈর্ঘের বর্ণিত উপাখ্যান। জীবনের কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণত গল্প তৈরি হয়, তাই গল্পকে জীবনের খণ্ডাংশ বলা হয়ে থাকে। গল্পের মধ্যে সীমিত বর্ণনা থাকে। স্বল্প পরিসরে ঘটনাকে নিজস্ব শৈলীতে বলে দেওয়া গল্পের মূল উদ্দেশ্য।
সাহিত্যের সূত্রপাত হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে। যদি গল্পের কথা বলি, তবে বলে রাখা উচিত মানুষরা যখন গুহায় বাস করতো তখনও মানুষ গল্প বলতো। এমনকি মানুষ যখন ভাষা আবিষ্কার করেনি,তখনও মানুষ ছবি একে গল্প বলার চেষ্টা করতো। এবং মানব সভ্যতার বিকাশে গল্পের বিস্তৃতি এত সুদুর প্রসারি যে, বলা যায় মানব সভ্যতার সুচনাই হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে।
আর, স্বভাবগত কারণেই মানুষ গল্প করে, আর গল্প করতে ভালোবাসে। মানুষ সুখের গল্প করে, দুঃখের গল্প করে, বানায়ে গল্প বলে, সত্য গল্প বলে, এমনকি আমরা যেসব ইতিহাস পড়ি, সেগুলো আসলে একটা সময়ের প্রামাণিক গল্প ছাড়া আর কিছুই না। তো মানুষ যেখানেই হোক, যেভাবেই হোক, গল্প বলে।
যখন মানুষরা সাহিত্য শব্দ আবিষ্কার করল সেই থেকে গল্প বলার আর, গল্প পড়ার অভ্যেস বেড়েই যেতে লাগলো। তারপর থেকে মানুষ তার মনের ক্ষুধা মেটাতেই অনেক খানি গল্প পড়া শুরু করল।মানব বিকাশের ধারায় মানুষের প্রথম বিনোদন ব্যবস্থা ছিল গল্প। তার ব্যাপকতা এখনও লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্যের শুরুর দিকে মানুষ গল্পের সাথে ছন্দ লাগিয়ে তাদের গল্প গুলোকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করতো। আর এই ভাবে তারা সফলও হয়েছেন। যেগুল কে আমার মহাকাব্য বলে জানি।
সাহিত্যের ধারায় একে একে যোগ হল নতুন নতুন গল্প বলার ধারা। কবিতা,উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, আর গল্প তো ছিলই তাতে আরও স্পষ্ট ধারা হল ছোটগল্প, শুধু গল্প, যা ছোট গল্পের চেয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে একটু বেশি, যোগ হল গল্পের ভাগ, কাল্পনিক আর বাস্তব। এই ভাবে একে একে এই গল্প বলার ধারা গুলো হয়ে গেল সতন্ত্র এক-একটি সাহিত্য প্রকাশ।
বর্তমান সময়ে বসে এই গল্প বলার বিস্তৃতি নিয়ে গল্প বলতে গেলে তা হয়তো একজন মানুষের সারাজীবন বলেও শেষ হবেনা।
আখ্যান, উপাখ্যান, গল্প বা কাহিনী বলতে কোনও একটি ঘটনা বা ধারাবাহিক সম্পর্কযুক্ত একাধিক ঘটনার লিখিত বা কথিত বর্ণনাকে বোঝায়। এটি গদ্যসাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ শাখা। আখ্যান বা গল্প নানা ধরনের হতে পারে, যেমন: ছোটগল্প, বড়গল্প, রূপকথার গল্প, ভৌতিক গল্প,গোয়েন্দা গল্পঃত্যাদি।[১]গল্প-Story কার না পড়তে ভালো লাগে। গল্প পড়া ও এক ধরনের নেশা। আর গল্প তো গল্পই হয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক-চরিত্র,স্থান,কাল ,পাত্র ই হয়। তবে কিছু কিছু গল্প বাস্তবকে খুব গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়।গল্পের সাথে কোন ব্যাক্তি, সম্প্রদায়ের সাথে মিল থাকে না বা কোন ব্যাক্তি, সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য করেও গল্প লেখা হয় না। যদি কোনও কারণ বশত ব্যাক্তি, সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য বা মিল খুঁজে পান, সেটা একেবারে কাকতালীয়। তাছাড়াও যদি কোন ব্যাক্তি, সম্প্রদায় আঘাত পেয়ে থাকেন,সেটা সম্পূর্ণ লেখকের অনিচ্ছাকৃ।বাংলা সাহিত্যে গল্পের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট গল্প
[সম্পাদনা]সাহিত্যরূপ হিসেবে ছোট গল্পের উদ্ভব ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই বাংলা ছোট গল্পের উদ্ভব ঘটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটগল্পের প্রথম ও প্রধান শিল্পী হলেও তাঁর পূর্বে পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বর্ণকুমারী দেবী, নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত- - প্রমুখ লেখক গল্পরচনায় পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'বেতাল পঞ্চবিংশতি' (১৮৪৭) নামক অনুবাদ গ্রন্থটির ঘটনা উপস্থাপনায় গল্পরসের পরিচয় পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dan McAdams (২০০৪)। "Redemptive Self: Narrative Identity in America Today"। The Self and Memory। 1 (3): 95–116। ডিওআই:10.1093/acprof:oso/9780195176933.001.0001।
পরিভাষা
[সম্পাদনা]- আখ্যান, উপাখ্যান - narrative
- গল্প - story
- কাহিনী (বিকল্প বানানে কাহিনি) - tale