বিষয়বস্তুতে চলুন

জবা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জবা
Hibiscus rosa-sinensis
পূর্ণাঙ্গ ফুল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: রোসাইডস
বর্গ: Malvales
পরিবার: মালভেসি
গণ: হিবিস্কাস
প্রজাতি: H. rosa-sinensis
দ্বিপদী নাম
Hibiscus rosa-sinensis
L.

জবা ফুল, মালভেসি পরিবারের হিবিসকি উপজাতির একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি চীনা হিবিস্কাস, চায়না রোজ, হাওয়াইয়ান হিবিস্কাস, রোজ ম্যালো নামেও পরিচিত। সাধারনত ইংরেজিতে একে হিবিস্কাস বলা হয়। ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে এটি একটি শোভাময় উদ্ভিদ হিসাবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।[][]

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

জবা একটি ঝোপঝাড়, চিরহরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ যা লম্বা এবং চওড়ায় যথাক্রমে ২.৫-৫মি (৮-১৬ ইঞ্চি) এবং ১.৫-৩মি (৫-১০ ইঞ্চি) হয়। এই গাছে একটি শাখাযুক্ত প্রধান মূল রয়েছে। এর কাণ্ড বায়বীয়, খাড়া, সবুজ, নলাকার এবং শাখাযুক্ত। এর পাতাগুলি চকচকে ও ফুলগুলি উজ্জ্বল লাল বর্ণের ও ৫টি পাপড়ি যুক্ত। ফুলগুলির ব্যাস ১০ সেমি(৪ ইঞ্চি) এবং গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালে ফোটে[]

জবাফুল

জবা ফুলের বিভিন্ন রং ও বৈচিত্র দেখা যায়।

লাল জবার কুঁড়ি
সাদা জবার কুঁড়ি, রাতের চিত্র।

বাগানের গাছ হিসেবে জবাকে গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। যেহেতু জবা ১০°সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জবা গাছকে গ্রীনহাউসে রাখা হয়। জবা গাছের বিভিন্ন রকমের সংকর প্রজাতি আছে, যাদের ফুলের রঙ সাদা, হলুদ,কমলা, ইত্যাদি হতে পারে।

নামকরণ

[সম্পাদনা]

বৈজ্ঞানিক ক্যারলাস লিনেয়াস জবার নাম দেন হিবিস্কাস রোসা-সিনেন্সিস। লাতিন শব্দ 'রোসা সিনেন্সিস'-এর অর্থ 'চীন দেশের গোলাপ', যদিও জবার সঙ্গে গোলাপের সম্পর্ক নেই। চীনদেশে এই গাছটি 'zhū jǐn 朱槿' নামে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে জবা গাছ বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন বাংলায় জবা, তামিলে செம்பருத்தி (সেম্বারুথি), হিন্দিতে जवा कुसुम (জবা কুসুম), মালয়লমে ചെമ്പരത്തി (সেম্পারাত্তি), ইত্যাদি।

ব্যবহার

[সম্পাদনা]

ভোজ্য হিসেবে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ সালাদের মধ্যে জবা ব্যবহৃত হয়। এটি ভারতের কিছু অংশে জু্তা চকচকে করতেও ব্যবহৃত হয়, তাই একে জুতা পরিষ্কারক ফুল বলা হয়। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় এই ফুলকে কেম্বাং সেপাতু বা বুঙ্গা সেপাতু বলা হয়, যার আক্ষরিক অর্থ "জুতার ফুল"।[][] ফুলটি পিএইচ সূচক হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। যখন ফুলটি কোনো অ্যাসিডিক দ্রবণে ডুবানো হয়, তখন এটি গাঢ় গোলাপী বা ম্যাজেন্টা রঙে পরিণত করে এবং ক্ষারীয় দ্রবণে এটি সবুজ রঙে পরিণত হয়। বেশ কয়েকটি দেশে ফুলগুলি শুকিয়ে পানীয়তে ব্যবহার করা হয় যেমন চা।

চীনা ভেষজবিজ্ঞানে জবা বেশ কয়েকটি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় বলে মনে করা হয়। চীনে ঐতিহ্যগত ভাবে ফুলের পাপড়ি দিয়ে কালো জুতো-পালিশ তৈরি করা এবংন মহিলার কালো চুলের রঙ তৈরি করা হয়। এই উদ্ভিদ এবং ফুল প্রসাধনীতে ত্বকের যত্নের জন্য ব্যবহার করা যায়, উদাহরণস্বরূপ, জবা ফুল থেকে প্রাপ্ত একটি নির্যাস অতিবেগুনী বিকিরণ শোষণ করে একটি এ্যান্টি-সোলার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে পারে।[]

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

জবা হলো মালেশিয়ার জাতীয় ফুল, যাকে মালয় ভাষায় বুঙ্গা রায়া বলা হয়। এটিকে "বড় ফুল" বা "উদযাপনকারী ফুল" নামেও বলা হয়। ১৯৫৮ সালে কৃষি মন্ত্রনালয় অল্প কয়েকটি ফুলের মধ্য ( যেমন ইয়লাং ইয়লাং, জুঁই, পদ্ম, গোলাপ, ম্যাগনোলিয়া এবং মেডলার) থেকে জবাকে জাতীয় ফুল হিসাবে মনোনীত হয়েছিল। ১৯৬০ সালের ২৮শে জুলাই মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা করে যে তাদের জাতীয় ফুল হবে জবা। লাল পাপড়ি মালয়েশিয়ার মানুষের সাহস, জীবন এবং দ্রুত বৃদ্ধির প্রতীক বহন করে এবং পাঁচটি পাপড়ি মালয়েশীয়ার পাঁচটি রুকুন নেগারা কে প্রতিনিধিত্ব করে। মালয়েশিয়ার রিঙ্গিতের নোট এবং মুদ্রায় এই ফুলের ছাপ পাওয়া যায়।

হাইতি দেশের একটি অনানুষ্ঠানিক জাতীয় ফুল জবা, যেখানে এটি পর্যটনের প্রচারের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফুলটি ফিউশন অফ হাইতিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস রাজনৈতিক দলের প্রতীকের মধ্যেও জবার চিহ্ন পাওয়া যায়। এটি হাইতিয়ান ক্রেওল ভাষায় চোব্ল্যাক বা রোজ কেয়েন নামে পরিচিত।[]

লাল জবা ফুল হিন্দুধর্মে উপাসনার জন্যও ব্যবহৃত হয়, এগুলি দেবীর উপাসনার ক্ষেত্রে এবং পূর্ব ভারত বাংলা অঞ্চলে এগুলি কালীর উপাসনার কাজে ব্যবহৃত হয়। তন্ত্রের মধ্যেও জবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

চিত্রাবলি

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "USDA GRIN Taxonomy"। ৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৪ 
  2. "Hibiscus rosa-sinensis" 
  3. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে, ১৯৮৮; পৃষ্ঠা-৫৩-৫৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
  4. Thulaja, Naidu Ratnala (December 2020) 
  5. Kembang sepatu 
  6. Nevade Sidram A., Sachin G. Lokapure and N.V. Kalyane. 2011. Study on anti-solar activity of ehanolic extract of flower of Hibiscus rosa-sinensis Linn. Research Journal of Pharmacy and Technology 4(3): 472–473. (পিডিএফ), ২৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  7. National symbols 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]