জিকা ভাইরাস
জিকা ভাইরাস | |
---|---|
জিকা ভাইরাসের ইলেক্ট্রোন মাইক্রোগ্রাফ।ভাইরাস কণার ব্যস ৪০ nm, বাহ্যিক আবরণ ও ঘন অভ্যন্তরীণ অংশ। (উৎস: CDC) | |
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস | |
গ্রুপ: | ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA) |
পরিবার: | ফ্ল্যাভিভাইরিডি |
গণ: | ফ্ল্যাভিভাইরাস |
প্রজাতি: | জিকা ভাইরাস |
জিকা ভাইরাস | |
---|---|
বিশেষত্ব | Infectious disease Zoonosis |
জিকা ভাইরাস ( ইংরেজি Zika virus) হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবারের অন্যান্য ভাইরাসের মত এটি আবরণযুক্ত ও আইকসাহেড্রাল আকৃতির একসূত্রক RNA ভাইরাস। এটি প্রথম ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় রেসাস ম্যাকাক বানরের দেহে পাওয়া যায়।পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়াতে মানবদেহে প্রথমবারের মত শনাক্ত করা হয়।
এই ভাইরাস মানব শরীরে প্রাথমিকভাবে জিকা জ্বর, জিকা অথবা জিকা রোগ করতে পারে। ১৯৫০ সাল থেকে এই ভাইরাস আফ্রিকা থেকে এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত নিরক্ষরেখা বরাবর অঞ্চলগুলোতে রোগ ছড়ায়। এটি ২০০৭ সালে ইয়াপ দ্বীপপুঞ্জে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। এতে কমপক্ষে ৪৯ জন মানুষ আক্রান্ত হয় কিন্তু কেউ মারা যায়নি। [১] ২০১৪ সালে এটি প্রশান্ত মহাসাগর এর ফরাসি পলিনেশিয়া অঞ্চলে ও পরবর্তীকালে ইস্টার আইল্যান্ডে এবং ২০১৫ সালে মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়ায়। [২] জিকা ভাইরাসটি ডেঙ্গু ভাইরাস, পীতজ্বর ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিস, এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস এর সাথে সম্পর্কিত। এই ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার সাথে ডেঙ্গু জ্বর এর কিছুটা মিল রয়েছে। [৩] বিশ্রাম নেওয়া হলো প্রধান চিকিৎসা [৪] এখনো এর কোন ওষুধ বা টীকা আবিষ্কৃত হয় নি।[৪] যে সকল নারীরা জিকা জ্বরে আক্রান্ত তাদের গর্ভের সন্তান মাইক্রোসেফালি বা ছোট আকৃতির মাথা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। [৫][৬] এছাড়া বড়দের ক্ষেত্রে এটি গিলেন বারে সিনড্রোম করতে পারে।
নামকরণ
[সম্পাদনা]উগান্ডার জিকা নামের একটি গ্রামের নাম অনুসারে রাখা হয়। স্থানীয় ভাষায় জিকা মানে বাড়ন্ত । সেখানেই বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রোগ ছড়ানোর মাধ্যম
[সম্পাদনা]মূলত ২ ধরনের এডিস মশা দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। গ্রীষ্মমণ্ডল ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলে Aedes aegypti মশার মাধ্যমে ছড়ায় কারণ শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারেনা। Aedes albopictus মশাও এই রোগ ছড়াতে পারে। এরা শীতপ্রধান অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট।জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে উক্ত মশাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। [৭] জিকা ভাইরাস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আমেরিকাতে এরকম ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।[৮]
ডায়াগনোসিস
[সম্পাদনা]জিকা ভাইরাস পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন(PCR)এর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় এবং রক্তের নমুনা থেকে ভাইরাস পৃথক করা যায়।[৯]
উপসর্গ
[সম্পাদনা]জিকা ভাইরাস যে রোগ সৃষ্টি করে তার নাম জিকা জ্বর।এর সাথে ডেঙ্গু জ্বর,পীত জ্বর প্রভৃতির অনেক মিল আছে। এর উপসর্গগুলো হলো জ্বর, হাল্কা মাথা ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, কনজাংটিভাইটিস, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা,পেশীতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুস্কুড়ি ইত্যাদি।রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে এই ভাইরাস কয়েকদিন থাকে তবে কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।এর সুপ্তিকাল কয়েকদিন হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। উপসর্গগুলো হালকা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্র হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। এবং ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুর্লভ। [১০]
জটিলতা
[সম্পাদনা]এই ভাইরাস নিয়ে আগে তেমন গবেষণা না হওয়ায় এর জটিলতা সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। ২০১৩-২০১৪ সালে ফরাসি পলিনেশিয়া অঞ্চলে জিকা ভাইরাস প্রাদূর্ভাবের সময় গিলেন ব্যারে সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে ব্রাজিলেও একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। এই বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়েছে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হলে এটি অমরা ভেদ করে গর্ভের সন্তানকে আক্রান্ত করতে পারে।বাচ্চা মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মায়। ২০১৫ সালে ব্রাজিলে এই ধরনের বাচ্চা জন্মের হার অনেক বেড়েছে। মাইক্রোসেফালি এমন একটি অবস্থা যেখানে বাচ্চার মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট হয়।বাচ্চার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠন ব্যাহত হবে। [১১]
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]এই রোগের কোন ওষুধ বা টীকা নেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে যেন পানিশূন্যতা না হয়। ব্যথা ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।তবে অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য NSAID যেমন আইবুপ্রফেন, ন্যাপ্রক্সেন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।[১২] এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত বাচ্চাদেরকে জ্বর ও ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন খাওয়ালে রাই সিনড্রোম (Reye syndrome) হতে পারে এবং বাচ্চা মারা যেতে পারে। [১৩]
প্রতিরোধ
[সম্পাদনা]জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহ রোগীর রক্তে ভাইরাস থাকতে পারে তাই এই সময় রোগীকে যেন মশা না কামড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ ঐ ব্যক্তিকে কামড়ালে ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করবে এবং ঐ মশা কোন সুস্থ্য ব্যক্তিকে কামড়ালে সে ব্যক্তিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এডিস মশা সাধারণত বালতি, ফুলের টব, গাড়ীর টায়ার প্রভৃতিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায় তাই সেগুলোতে যেন পানি না জমে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া পুরা শরীর ঢেকে থাকে এমন কাপড় পরিধান করতে হবে, মশারির নিচে ঘুমাতে হবে। [১৪] এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌনমিলন করা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হচ্ছে। [১৫]
জিকা ভাইরাসের টিকা
[সম্পাদনা]এখনও জিকা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এটি বানানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা। পরীক্ষার জন্য জিকা ভাইরাসের টিকা পেতে দুই বছর লাগতে পারে। তবে এটি হাতে আসতে এক দশক সময় লাগতে পারে।[১৬][১৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ LEVINSON, WAREN (২০০৬)। Review of Medical Microbiology and Immunology (Thirteenth সংস্করণ)। Lange। পৃষ্ঠা 382।
- ↑ McKenna, Maryn (১৩ জানুয়ারি ২০১৬)। "Zika Virus: A New Threat and a New Kind of Pandemic"। Germination। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Zika virus infection"। ecdc.europa.eu। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৬। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 11 (সাহায্য) - ↑ ক খ "Symptoms, Diagnosis, & Treatment"। Zika Virus। DVBD, NCEZID, Centers for Disease Control and Prevention।
- ↑ Oliveira Melo, A. S.; Malinger, G.; Ximenes, R.; Szejnfeld, P. O.; Alves Sampaio, S.; Bispo de Filippis, A. M. (১ জানুয়ারি ২০১৬)। "Zika virus intrauterine infection causes fetal brain abnormality and microcephaly: tip of the iceberg?"। Ultrasound in Obstetrics & Gynecology (ইংরেজি ভাষায়)। 47 (1): 6–7। আইএসএসএন 1469-0705। ডিওআই:10.1002/uog.15831।
- ↑ "Epidemiological update: Outbreaks of Zika virus and complications potentially linked to the Zika virus infection"। European Centre for Disease Prevention and Control। ৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Q&A about Zika virus"। who.int। WHO। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Zika virus infection 'through sex' reported in US"। bbc.co.uk। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Zika virus factsheet"। who.int। WHO। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Symptoms of zika virus"। center for disease control। CDC। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "complications of zika virus"। who.int। WHO।
- ↑ "Treatment of zika virus"। center for disease control। CDC। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Reye's Syndrome"। mayoclinic.org। Mayoclinic। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "What can I do to protect myself?"। who.int। WHO। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "শারীরিক সম্পর্কের' মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে জিকা ভাইরাস"। ittefaq.com.bd। Ittefaq। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ http://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2016/01/30/319167
- ↑ http://www.prothomalo.com/international/article/752965/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E2%80%98%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AB%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8B%E2%80%99-%E0%A6%9B%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87