বিষয়বস্তুতে চলুন

জ্যঁ ক্যুয়ে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যঁ ক্যুয়ে
Jean Kay
জন্ম
Jean-Eugène-Paul Kay

৫ জানুয়ারি ১৯৪৩
মিলিয়ানা, আলজেরিয়া
মৃত্যু২৩ ডিসেম্বর ২০১২(2012-12-23) (বয়স ৬৯)[]
পেশালেখক

জ্যঁ ক্যুয়ে (জন্ম: ১৯৪২ – ২০১২) পুরো নাম জ্যঁ ইউজিন পল ক্যুয়ে, একজন ফরাসী নাগরিক ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সুহৃদ। তিনি এদেশের নিপীড়িত জনতাকে সাহায্য করার জন্য ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে ফ্রান্স থেকে পিআইএ-এর একটি বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা করে বিশ্ব গণমাধ্যমের নজরে আসেন।[]

১৯৭১ এর বিমান ঘটনা

[সম্পাদনা]

জ্যঁ ক্যুয়ে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্যাগে বোমা ও হাতে রিভলবার নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে দাঁড়ানো পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের একটি বোয়িং ৭২০ বিমানের ককপিটে উঠে পড়েন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী দাবি করেন।[][] মাত্র ২৮ বৎসর বয়সী এই দু:সাহসী ফরাসী যুবক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এই বিমানকে পাঁচ ঘণ্টা রানওয়েতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তার একমাত্র দাবি ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী যুদ্ধরত মানুষ, বিশেষ করে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী শরণার্থীদের, সাহায্যার্থে কিছু ঔষুধ ঐ বিমানটিতে তুলে পাঠাতে হবে। এই অসামান্য ঘটনা টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল এবং পরদিন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।

দুপুর ১১.৫০ মিনিটে পিআইএ-র বোয়িংটির ককপিটে গিয়ে পাইলটের গায়ে ৯এমএম পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি দাবী তোলেন ঔষধ সামগ্রী পাঠাতে হবে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে। তার হাতে একটি বাক্স; সে বললো এটি বোমা। সাহায্য না-পাঠানো হলে বোমা ফাটিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেয়া হবে। ভয়ে কাঁপতে থাকলো যাত্রীরা যাদের অধিকাংশই পাকিস্তানি। ততক্ষণে টিভিতে “সরাসরি” দেখানো হচ্ছে সব কিছু। এ সময় পশ্চিম জার্মানির তদানীন্তন ভাইস চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট ফ্রান্স সফরে এসেছেন। এ সফরের উদ্দেশ্য নানা দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট পম্পেডুর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করা। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সব কর্মসূচী ভেস্তে যায়।

আলোচনা

[সম্পাদনা]

আলোচনায় বসা হলো জ্যঁ ক্যুয়ে’র সঙ্গে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, ব্যক্তিগত কোনো লাভালাভের ব্যাপার এখানে নেই। তিনি কেবল চান মুক্তিযুদ্ধরত পূর্ব পাকিস্তানে যেন ফ্রান্স সরকার ঔষুধ সরবরাহ করে সহায়তা করে। আর পিআইএর এই বিমানে করেই যেন সেই মালামাল বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয়। [][]

দাবী পূরণ

[সম্পাদনা]

জ্যঁ ক্যুয়ের দাবিও ফরাসী সরকার সহজে মেনে নেয়নি। কমান্ডো বাহিনী দিয়ে দিয়ে অর্লি বিমানবন্দর ছেয়ে ফেলে ফরাসী সেনাবাহিনী। তবে এক পর্যায়ে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে সরকার মেনে নেয় তার দাবি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ফরাসী রেডক্রস ও অন্য একটি সাহায্য সংস্থার সহায়তায় দ্রুত সংগ্রহ করে অর্লি বিমান বন্দরে আনা হয় ১ টন ঔষধ। শেষাবধি পিআইএ-র ঐ বিমানেই তোলা হয় ১ টন ঔষুধ এবং বাকী ঔষধ অনতিবিলম্বে প্রেরণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়। বিমানে ঔষধ বোঝাই করার মুহূর্তে মেকানিকের ছদ্মবেশে ২জন পুলিশ উঠে ককপিটে গিয়ে জ্যঁ ক্যুয়েকে আক্রমণ করে বসে এবং কিল-ঘুষিতে কাবু করে গ্রেপ্তার ফেলে। অঁদ্রে দ্য মল্টা নামের একটি সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে সেই ঔষুধ বাংলাদেশে পৌঁছানো হয়েছিল। জ্যঁ ক্যুয়ের কাছে কোন বোমা ছিল না। যে বাক্সটি তাঁর হাতে ছিল তাতে কেবল কিছু বৈদ্যুতিক তার, বই, এক কপি বাইবেল এবং একটি ইলেকট্রিক শেভার পাওয়া গিয়েছিল। তথাপি বিমান হাইজ্যাকের অপরাধে আদালতে তার বিচার হয়েছিল এবং তার ৫ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল। তবে ১৯৭৩-এ তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

এ ঘটনার ফলে ফরাসি সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশকে সাহায্য করবার। ভারতের আশ্রয় শিবিরে এসেছিল সেই ২০ টন ওষুধ আর চিকিৎসা সামগ্রী। পুরো ঘটনা আলোড়ন তোলে ইউরোপিয়ান ও আন্তজার্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এমনকি জাতিসংঘের পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও বন্ধুরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন না করে ভোটদানে বিরত থাকে ফ্রান্স। []

চলচ্চিত্র নির্মাণ

[সম্পাদনা]

১৯৭১-এ জ্যঁ কে’র এই ঘটনা অবলম্বনে বাংলাদেশে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। এর প্রযোজক ও পরিচালক ফাখরুল আরেফিন খান। চলচ্চিত্রটি ২০২১ এর ডিসেম্বরের ৩ তারিখে মুক্তি পাওয়া কথা রয়েছে। চলচ্চিত্রটির নাম জেকে ১৯৭১[][]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

https://www.nytimes.com/1971/12/04/archives/paris-police-thwart-airliner-hijacking.html