ভিয়েতনামের ভূগোল
ভিয়েতনাম দেশটির আকৃতি অনেকটা ইংরেজি এস (s) অক্ষরের মত। এটি উত্তরে চীনের সীমান্ত থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর পর্যন্ত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। দেশের সবচেয়ে সরু অংশ দা নাং বন্দর শহরের ঠিক উত্তরে অবস্থিত; এখানে পূর্বের সাগর থেকে পশ্চিমের সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। ভিয়েতনামের মোট আয়তন ৩,৩১,৬৯০ বর্গকিলোমিটার।
ভৌগোলিক অঞ্চল
[সম্পাদনা]ভিয়েতনাম চারটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চল নিয়ে গঠিত। উত্তরতম অঞ্চলটি মূলত ঘন অরণ্যাবৃত রুক্ষ পর্বতমালার এক জটপাকানো অঞ্চল; এটি গণচীনের ইউনান মালভূমি থেকে ভিয়েতনামে প্রসারিত হয়েছে। ভিয়েতনামে এই পর্বতগুলির মধ্য সর্বোচ্চটির নাম ফান সি পান; ৩,১৪৩ মিটার উচ্চতার ফান সি পান ভিয়েতনামের সর্বোচ্চ বিন্দু।
উত্তরের পার্বত্য উচ্চভূমির পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে লোহিত নদীর অববাহিকা; এটি মূলত একটি ত্রিভুজাকৃতির পলিময় সমভূমি যা দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বাহু টংকিন উপসাগরের তীরে অবস্থিত।
লোহিত নদীর ব-দ্বীপের দক্ষিণেই রয়েছে ট্রুওং সন উচ্চভূমি, যা ভিয়েতনামের ঊর্ধ্ব-মধ্যভাগ বা "মেরুদণ্ড" গঠন করেছে। একই এলাকায় আরও আছে কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, যা মূলত ক্যাম্বোডিয়া সীমান্ত এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি বিশাল মালভূমি।
ভিয়েতনামের চতুর্থ এবং দক্ষিণতম অঞ্চলটি হল মেকং নদীর ব-দ্বীপ। জলাময় ও উর্বর এই সমতল ভূমিটি কেন্দ্রীয় উচ্চভূমির দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণের কা মাউ উপদ্বীপের ম্যানগ্রোভ জলাভূমিগুলি পর্যন্ত বিস্তৃত।
নদী
[সম্পাদনা]ভিয়েতনামের দুইটি প্রধান নদী হল উত্তরের লোহিত নদী এবং দক্ষিণের মেকং নদী। দুইটি নদীই সম্পূর্ণ নাব্য। লোহিত নদী দক্ষিণ চীন থেকে উৎপত্তি লাভ করে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে ভিয়েতনামের উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্য উচ্চভূমিতে প্রবেশ করে সাগরে পতিত হয়েছে। অন্য দিকে মেকং নদী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে একটি অনিয়মিত গতিপথে প্রবাহিত হয়ে ভিয়েতনামে প্রবেশ করে দক্ষিণ চীন সাগরে পড়েছে।
অতীতে মেকং ব-দ্বীপ অববাহিকাতে চাষাবাদ বেশ কষ্টসাধ্য ছিল, কেন না দক্ষিণ চীন সাগরের লবণাক্ত পানি প্রায়ই নিম্নভূমিগুলিকে প্লাবিত করত। এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে ফরাসিরা ২০শ শতকে এখানে বাঁধ নির্মাণ করে। বর্তমানে বাঁধ ও খালের এক জটিল ব্যবস্থার মাধ্যমে মেকং ও লোহিত নদীর ব-দ্বীপগুলিতে প্লাবন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ভিয়েতনামের অন্যান্য প্রধান নদীর মধ্যে হুয়ে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হুওং নদী এবং ভিনহ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয় কা লং ও নদী উল্লেখযোগ্য।
তটরেখা
[সম্পাদনা]ভিয়েতনামের সমুদ্র তটরেখা উত্তরে চীন সীমান্ত থেকে দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগরে ক্যাম্বোডিয়ার সাথে সীমান্ত পর্যন্ত ৩,৪৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে কিছু এলাকায়, যেমন কেন্দ্রীয় উচ্চভূমির পূর্বে এবং লোহিত নদীর ব-দ্বীপের উত্তরে পর্বতমালা সাগরের একেবারে তীর ঘেঁষে উঠে গেছে। এর ফলে জাহাজ পরিবহনের জন্য অনুকূল বেশ কিছু সুরক্ষিত প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় সৃষ্টি হয়েছে; এদের মধ্যে দা নাং, কুই ন্হোন এবং ন্হা ট্রাং বন্দর শহরগুলি উল্লেখযোগ্য। পর্বতগুলি উপকূল এলাকায় সুন্দর পটভূমির সৃষ্টি করেছে এবং এ কারণে দা নাং ও ন্হা ট্রাং ভিয়েতনামের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলির অন্যতম। বাকী তটভূমিগুলি মূলত নদীর বয়ে নিয়ে আসা পলি নিয়ে গঠিত সমতল, ত্রিভুজাকৃতির ব-দ্বীপ।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]ভিয়েতনামের জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র। মধ্য ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ঋতুভেদে জলবায়ুর পরিবর্তন সামান্য এবং এখানে মূলত শুষ্ক ও বর্ষা এই দুই ধরনের ঋতু বিদ্যমান। মেকং অববাহিকায় জানুয়ারিতে তাপমাত্রা ১৭-৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং জুলাই মাসে ২২-৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। মধ্যভাগের উপকূলে তাপমাত্রা জানুয়ারিতে ১৮-২৮ ডিগ্রী এবং জুলাইতে ২৪-৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। উত্তরের সমভূমিতে ঋতুভেদে জলবায়ুর পার্থক্য অনেক বেশি এবং রাতের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে; এখানে জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী বা তার নিচে থাকে এবং জুলাইতে তাপমাত্রা ২৫-ঊর্ধ্ব ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে।
সারা ভিয়েতনামেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ ও মধ্য ভিয়েতনামে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মেকং অববাহিকাতে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত হয়। মধ্য ভিয়েতনামে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর ভিয়েতনামেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। মধ্যভাগের উপকূলে মাঝে মাঝে টাইফুন আঘাত হানে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এগুলি বহু প্রাণহানি ও আবাদী জমির ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।