বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:৩৭, ১০ জুলাই ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীকান্ত
১৬

 এই সুযোগে একটা চোর নাকি ছুটিয়া পলাইতেছিল, দেউড়ীর সিপাহীরা তাহাকে ধরিয়া ফেলিয়াছে। পিসেমশাই প্রচণ্ড চীৎকারে হুকুম দিতেছেন—আউর মারো—শালাকো মার ডালো—ইত্যাদি।

 মুহূর্ত্তকাল মধ্যে আলোয়, চাকর-বাকরে ও পাশের লোকজনে উঠান পরিপূর্ণ হইয়া গেল। দরওয়ানরা চোরকে মারিতে মারিতে আধমরা করিয়া টানিয়া আলোর সম্মুখে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিল। তখন চোরের মুখ দেখিয়া বাড়ী-সুদ্ধ লোকের মুখ শুকাইয়া গেল! আরে, এ যে ভট্‌চায্যিমশাই!

 তখন কেহ বা জল, কেহ বা পাখার বাতাস, কেহ বা তাঁহার চোখে-মুখে হাত বুলাইয়া দেয়। ওদিকে ঘরের ভিতরে মেজদাকে লইয়া সেই ব্যাপার!

 পাখার বাতাস ও জলের ঝাপ্টা খাইয়া রামকমল প্রকৃতিস্থ হইয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিয়া উঠিলেন। সবাই প্রশ্ন করিতে লাগিল, আপনি অমন ক’রে ছুট্‌ছিলেন কেন? ভটচায্যিমশাই কাঁদিতে কাঁদিতে কহিলেন, বাবা, বাঘ নয়, সে একটা মস্ত ভালুক—লাফ মেরে বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে এলো।

 ছোড়দা ও যতীনদা বারংবার কহিতে লাগিলেন, ভালুক নয় বাবা, একটা নেকড়ে বাঘ। হুম্‌ ক’রে ল্যাজ গুটিয়ে পা-পোষের উপর বসেছিল।

 মেজদা’র চৈতন্য হইলে তিনি নিমীলিতচক্ষে দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া সংক্ষেপে কহিলেন, ‘দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার’।

 কিন্তু কোথা সে? মেজদার ‘দি রয়েল বেঙ্গল’ই হোক্, আর রামকমলের ‘মস্ত ভালুক’ই হোক্, সে আসিলই বা কিরূপে, গেলই বা কোথায়? এতগুলো লোক যখন দেখিয়াছে, তখন সে একটা কিছু বটেই!