উষ্ণ বায়ু বেলুন
উষ্ণ বায়ু বেলুন বাতাসের চেয়ে হালকা একটি আকাশযান, যাতে একটি থলে (এনভেলপ) থাকে। এই ব্যাগে গরম বাতাস অবস্থান করে। এই থলের নিচে যাত্রীদের বহন করার জন্য বাঁশ বা এ জাতীয় জিনিস দিয়ে তৈরী একটি ক্যাপসুল বা গন্ডোলা বা ঝুড়ি থাকে। এতে একটি তাপের উৎসও থাকে যা প্রোপেন পুড়িয়ে শিখা জ্বালানোর মাধ্যমে ক্রমাগত গরম বাতাস সরবরাহ করে। থলের ভেতরের এই গরম বাতাস একে ভেসে থাকতে সাহায্য করে কারণ এর ঘনত্ব বাইরের ঠান্ডা বাতাসের ঘনত্ব থেকে কম। অন্য আকাশযানগুলোর মতন এই উষ্ণ বায়ু বেলুন বায়ুমন্ডলের উপরে চলাচল করতে পারেনা। থলেটিকে নিচের দিক থেকে আটকে দেবার দরকার হয়না, কারণ ভেতরের গরম বাতাস আর চারপাশের বাতাস এর চাপ সমান। আধুনিক খেলায় বেলুনের থলেগুলো নাইলনের সুতার দিয়ে তৈরী হয় আর থলের চুল্লির কাছাকাছি অংশ বা নিচের অংশ অগ্নি প্রতিরোধক পদার্থ নোমেক্স দিয়ে তৈরী। আধুনিক বায়ু বেলুনগুলোর অনেক রকমের আকার আছে। যেমনঃ রকেট আকৃতি, বিভিন্ন ব্যবসায়িক পণ্যের আকৃতি। যদিও প্রচলিত আকৃতিটিই সর্বাধিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উষ্ণ বায়ু বেলুনই প্রথম সফল মানুষ বহনকারী উড্ডয়ন প্রচেষ্টা ছিল। প্রথম মানুষ বহনকারী মুক্ত উষ্ণ বায়ু বেলুন এর যাত্রী ছিলেন য্য-ফ্র্যান্সিস পিলাট্রে ডি রোসিয়ের এবং ফ্রান্সোয়া লরেন্ত ডি'আরলান্ড।
তারা ফ্রান্সের প্যারিসে[১] ১৭৮৩ সালের নভেম্বরের ২১ তারিখ মন্টগলফিয়ার ভাইদের বানানো বেলুনের আরোহণ করেন। [২] ১৭৯৩ সালের ৯ই জানুয়ারি ফরাসি বৈমানিক জ্য-পিয়েরে-ব্লাচার্ড [৩] আমেরিকায় উড়ানো প্রথম উষ্ণ বায়ু বেলুনে আরোহণ করেন। এই বেলুন ফিলাডেলফিয়ার ওয়ালনাট স্ট্রিট জেলখানা থেকে উড়ানো হয়। যেসব উষ্ণ বায়ু বেলুন বাতাসের মধ্য দিয়ে ভেসে যাবার পরিবর্তে চালনা করা যায় তাদের তাপমান উড়োজাহাজ বলা হয়।
ইতিহাস
আধুনিক-পূর্ব এবং মানববিহীন বেলুন
শুরুতে চীনে যাত্রীবিহীন উষ্ণ বায়ু বেলুন ব্যবহার করা হত। তিন রাজ্য যুগে (২২০-২৮০ খ্রিস্টপূর্ব) সু-হান রাজ্যের জুগে-লিয়াং এ সামরিক বাহিনীকে নির্দেশনা বা সতর্কতা দেবার জন্য বাতাসে ভাসতে সক্ষম ফানুস ব্যবহার করা হত। এদেরকে চাইনিজ লণ্ঠন বলা হত ।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে পর্তুগীজ পাদ্রী বার্তামেউ ডি গাসমাও পাসসারোলা নামে একটি বায়মান যন্ত্রের কল্পনা করেন যা আসলে উষ্ণ বায়ু বেলুনের পূর্বসুরী ছিল। পাসসারোলার কল্পনার পেছনে লক্ষ্য ছিল একে আকাশযান হিসেবে ব্যবহার করে যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা কৌশল ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা। [৪] ১৭০৯ সালে পর্তুগালের জন দ্য ফিফথ বার্তামেউর এই উদ্যোগকে অর্থ সহায়তা দেবার সিদ্ধান্ত নেন [৫] এবং কাসা দা ইন্ডিয়া তে একটি মানববিহীন আকাশযান এর চলন প্রদর্শিত হয় যেখানে জন দ্য ফিফথ, অস্ট্রিয়ার রাণী আনা মারিয়া উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইতালির ধর্মপ্রধান মিশেলেঞ্জেলো কন্তি, পর্তুগালের রয়েল একাডেমি অফ হিস্ট্রির দুই সদস্য, একজন পর্তুগীজ কূটনীতিবিদ এবং একজন লেখক যিনি সবকিছু লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই ঘটনা উষ্ণ বায়ু বেলুনের উপর ইউরোপের কিছু দেশের আগ্রহে জ্বালানি দেয়। লন্ডনের ডেইলি ইউনিভার্সাল এ ১৭৮৬ সালের অক্টোবরের ২০ তারিখে প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছিল যে আবিস্কারক নিজেকে এই বায়ু বেলুনের সাহায্যে উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাছাড়া ১৭০৯ সালে পর্তুগীজ জেসুত লিখেছিলেন Manifesto summario para os que ignoram poderse navegar pelo elemento do ar( বাতাসের মধ্য দিয়ে যারা ভাসতে জানে না তাদের জন্য একটি ঘোষণাপত্র) জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিচারপ্রক্রিয়ার কারণে তার এই গবেষণা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি; যদিও তিনি মানুষ বুহন করতে সক্ষম একটি আকাশ বেলুনের নকশা রেখে গেছেন।
প্রথম মানুষবহনকারী যাত্রা
জোসেফ মাইকেল এবং জ্যাকুয়াস-এতিন মন্টগলফিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় ফ্রান্সের এনোনায় একটি উষ্ণ বায়ু বেলুন গড়ে তোলেন এবং ১৭৮৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জনসম্মুখে প্রদর্শন করেন। এই মানববিহীন বেলুন ১০ মিনিট ধরে উড়ে। মানববিহীন বেলুন নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর এবং পরবর্তীতে পশুবাহিত বেলুন উড়ানোর পর, ১৭৮৩ সালের ১৫ অক্টোবর মানববাহিত প্রথম বেলুনযাত্রা সূচনা হয়। এর পেছনে ছিলেন জ্যিন-ফ্রাঁসোস পিলাত্রে দে রোসিয়ের। একই দিনে রোসিয়ের দড়ি দিয়ে ভূমির সাথে আবদ্ধ একটি বেলুনে চড়ে ২৬ ফুট উচ্চতায় আরোহণ করেন(দড়ির দৈর্ঘ্য)এবং দ্বিতীয় আকাশচারী হিসেবে ইতিহাসে নিজের নাম লেখান। মানুষ যাত্রী বহন কারী প্রথম মুক্ত যাত্রা এর কয়েক সপ্তাহ পরে হয়,১৭৮৩ সালের নভেম্বরের ২১ তারিখ। রাজা ষোড়শ লুইস প্রথমে হুকুম দিয়েছিলেন যে প্রথম যাত্রীদের সবাইকে শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি হতে হবে। কিন্তু দে রোসিয়ের এবং মার্কাস ফ্রাসোস দে আর্লান্দেস সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের যাত্রী হিসেবে নেবার জন্য আইনি আবেদন করেন এবং সফল হন। উষ্ণ বায়ু বেলুন প্রথম সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয় ১৭৯৪ সালে, ফ্লিউরাসের যুদ্ধে। যেখানে ফরাসি বাহিনী বেলুনগুলো দূরে পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করেছিল।
বর্তমান
আধুনিক উষ্ণ বায়ু বেলুন গুলোতে একটি তাপের উৎস থাকে। এড ইয়োস্ট এগুলোর প্রথম নির্মাণ করেন ১৯৫০ এর দশকে। তার কাজ প্রথম সফলতার মুখ দেখে ১৯৬০ সালের অক্টোবরের ২২ তারিখ। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যে ব্রিস্টল বেল প্রথম আধুনিক উষ্ণ বায়ু বেলুন বানান। বর্তমানে উষ্ণ বায়ু বেলুন প্রধানত চিত্তবিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। উষ্ণ বায়ু বেলুন অনেক উচ্চতায় উড়তে পারে। ২০০৫ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখ ভিজয়পাথ সিংহানিয়া উষ্ণ বায়ু বেলুনে সবচেয়ে উঁচুতে ওড়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন(২১০২৭ মিটার)। তিনি ভারতের মুম্বাই থেকে যাত্রা শুরু করে ২৪০ কিমি দূরবর্তী শহর মহারাষ্ট্রের পাঁচালে অবতরণ করেন। [৬] এর আগের রেকর্ড ছিল পার লিন্ডস্ট্র্যান্ড এর(১৯৮১১ মিটার)। ১৯৮৮ সালের জুনের ৬ তারিখ তিনি টেক্সাসের প্লানোতে এই উচ্চতায় আরোহণ করেছিলেন।
১৯৯১ সালের ১৫ জানুয়ারি "দ্য ভার্জিন প্যাসিফিক ফ্লায়ার" সবচেয়ে লম্বা দুরত্ব অতিক্রম করে উষ্ণ বায়ু বেলুন হিসেবে। এর মাধ্যমে লিন্ডস্ট্র্যান্ড এবং রিচার্ড ব্র্যান্সন ৭৬৭১.৯১ কিমি পাড়ি দিয়ে জাপান থেকে উত্তর কানাডায় গিয়ে পৌছান। এই বেলুনের খাম(এনভেলপ) ছিল তখন পর্যন্ত বেলুনের জন্য বানানো সবচেয়ে বড় খাম। এর আয়তন ছিল ৭৪০০০ ঘনমিটার। আন্ত-প্রশান্ত মহাসাগর যাত্রার জন্য বানানো এই প্যাসিফিক ফ্লায়ার সর্বোচ্চ গতির ইতিহাস গড়ে(ঘণ্টায় ২৪৫ মাইল)। সবচেয়ে বেশি সময় ভাসমান থাকার রেকর্ড ছিল সুইস মনোরোগবিদ বারট্রান্ড পিকার্ড এবং ব্রিটন ব্রায়ান জোন্স এর। তারা ব্রিইটলিং অরবিটার ৩ এ চড়েন, যা ছিল পুরো পৃথিবী পরিভ্রমণকারী প্রথম বেলুন। এই বেলুন সুইজারল্যান্ড থেকে ১৯৯৯ সালের ১ মার্চ যাত্রা শুরু করে কায়রোর ৩০০ মাইল দক্ষিণে মিশরের মরুভূমিতে মার্চের ২১ তারিখ রাত ১ঃ০২ এ অবতরণ করে।তাদের যাত্রাকাল ছিল ১৯ দিন,২১ ঘণ্টা এবং ৫৫ মিনিট। এই যাত্রা দুরত্ব,সময়কাল এর দিক থেকে ইতিহাস গড়ে। সবচেয়ে কম সময়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণের রেকর্ড এরপর ভাঙ্গেন স্টিভ ফসেট। তিনি ২০০২ সালের ৩ জুলাই তার নিজের ষষ্ঠ চেস্টায় ৩২০ ঘণ্টা ৩৩ মিনিটে পুরো পৃথিবী একাই প্রদক্ষিণ করেন। এরপর ফেদর কোনিওখোভ ২০১৬ সালের ১১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিজের প্রথম প্রচেস্টাতেই পৃথিবী পরিভ্রমণ করেন । তার যাত্রাকাল ছিল ২৬৮ ঘণ্টা ২০ মিনিট। তার বেলুনে জ্বালানি ছিল মিশ্র প্রকৃতির,গরম বাতাস এবং হিলিয়ামের মিশ্রণ। [৭]
উষ্ণ বায়ু বেলুনের গঠন/নির্মাণ
মানুষবাহী একটি উষ্ণ বায়ু বেলুন একটি একক স্তরবিশিষ্ট সুতার তৈরী গ্যাস থলে ব্যবহার করে, যার নিচের অংশকে বলা হয় মুখ বা গলা। এই থলের সাথে যাত্রীদের বহন করার জন্য একটি ঝুড়ি অথবা গন্ডোলা লাগানো থাকে। ঝুড়ির তলার সাথে লাগানো এবং থলের মুখের দিকে তাক করে থাকে একটি চুল্লি বা বার্নার। এটি ভেতরের বাতাসকে গরম করে এবং থলের ভেতরে অগ্নিশিখা নির্গত করে। এই চুল্লির জ্বালানি হল প্রোপেন, একটি তরলীকৃত গ্যাস যা অধিকচাপে একটি পাত্রে থাকে, ফোর্কলিফট সিলিন্ডারের মতন। [৮]
খাম (এনভেলপ)
আধুনিক বায়ু বেলুন গুলো সাধারণত রিপস্টপ নাইলন বা ড্যাক্রন(একটি পলিএস্টার) দিয়ে তৈরী হয়।
প্রস্তুতকরণের সময় উপাদানগুলোকে প্রথমে বিভিন্ন সারিতে ভাগ করে তারপর একসাথে জোড়া লাগানো হয় লোড টেপ এর সাহায্যে। এটা ঝুড়ির ভর বহন করে। প্রতিটি স্বতন্ত্র ভাগ থলের গলা থেকে চূড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এদেরকে গোর বা গোর বিভাগ বলা হয়। একটি থলেতে ৪ থেকে ২৪ কিংবা তার বেশি গোর থাকতে পারে।
থলের চূড়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি মূকুটের মতন অংশ থাকে। এটি নরম ধাতু(সাধারণত এলুমিনিয়াম) দিয়ে তৈরী একটি চক্রাকৃতির অংশ যার ব্যাস মোটামুটি এক ফুটের মতন হয়। থলের মেঝের সাথে চূড়ার মুকুট উলম্ব লোড টেপ দিয়ে সংযুক্ত থাকে।
থলের গোড়াতে উলম্ব লোড টেপগুলো চক্রাকারে সেলাই করা থাকে যা তারের সাথে যুক্ত থাকে(প্রতি লোড টেপের জন্য একটি করে তার)। এই তারগুলো উড়ন্ত তার নামেও পরিচিত। এরা ঝুড়ির সাথে ক্যারাবাইনারস দিয়ে সংযুক্ত থাকে।
স্তরবিন্যাস
বিভিন্ন স্তরগুলোকে একসাথে সেলাই করার জন্য সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হল ফ্রেঞ্চ ফেল বা দুই স্তর সেলাই পদ্ধতি। [৯][১০][১১][১২]। সুতার দুই অংশ একটার উপর আরেকটা ভাঁজ করে তাদের এক প্রান্ত জোড়া লাগানো হয় দুইবার সমান্তরাল সেলাইয়ের মাধ্যমে। সম্ভব হলে লোড টেপও সেলাইয়ে রাখা হয়।
সেলাইয়ের আরেকটা পদ্ধতির নাম হল সমতল ভাঁজ পদ্ধতি। এখানে সুতার দুটি অংশ একত্রে সেলাই করা হয় দুটি সমান্তরাল এবং একটি আঁকাবাঁকা সেলাইয়ের মাধ্যমে। আঁকাবাঁকা সেলাইগুলো এক্ষেত্রে দুই স্তরের বুননকে ধরে রাখে।
আবরণ
সুতা দিয়ে তৈরী অংশটিতে (অথবা অন্তত এর কিছু অংশ,উদাহরণস্বরুপ এর উপরের তিন ভাগের এক ভাগ) সিলিকন বা পলিইউরিথেনের প্রলেপ দেয়া থাকে যাতে এটি বাতাসের জন্য অভেদ্য হয়। [১৩]
সুতার দৃড়তা কমে যাওয়া নয়, বরং এই আবরণের ক্ষয় এবং অভেদ্যতা কমে যাওয়াই থলের কার্যকরিতা নস্ট করে দেয়। তাপ, আদ্রতা এবং যান্ত্রিক ক্ষয় বসানোর সময় - এগুলোই ক্ষয়ের প্রধান কারণ। কোন থলেতে অনেক ছিদ্র তৈরী হলে সেটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। এটিকে তখন নেকড়া বা অতিরিক্ত কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাপড়্গুলোকে পুনরায় যাতে প্রলেপ দেয়া যায়, সেজন্য এখন নতুন নতুন প্রলেপ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসছে। [১৪]
আকৃতি এবং ধারণক্ষমতা
বাজারে বিভিন্ন আকৃতির থলে পাওয়া যায়। এক যাত্রী বহন করতে সক্ষম এমন সবচেয়ে ছোট ঝুড়িবিহীন বেলুন গুলোর থলের আয়তন ৬০০ ঘনমিটারের মত হয়। [১৫] এদেরকে হপারস বা ক্লাউডহপারস বলা হয়। সম্পূর্ণ গোলকাকৃতির থলের ব্যাসার্ধ ৫ মিটারের মত হয় ।
বাণিজ্যিকভাবে চারপাশ দেখার জন্য ব্যবহৃত বেলুনগুলো ২৪ জনের মত যাত্রী নিতে পারে একসাথে। এর থলের আয়তন হয় ১৭০০০ ঘনমিটার পর্যন্ত। [১৫] সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বেলুনের থলের আয়তন হল ২৮০০ ঘনমিটার যা ৩-৫ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
বায়ু নির্গমন
বেলুনের উপরিভাগে বায়ু নির্গমনের একটি ব্যবস্থা থাকে। এর মাধ্যমে চালক গরম বাতাস ছেড়ে দিতে পারেন(উপরে উঠার গতি কমানোর জন্য,নিচে নামা শুরু করার জন্য অথবা নিচে নামার গতি বাড়ানোর জন্য)। কিছু উষ্ণ বায়ু বেলুনের ঘূর্ণন নির্গম পথ থাকে যা বেলুনের পাশ বরাবর অবস্থান করে। এগুলো যখন খোলা হয় তখন বেলুন ঘুরতে থাকে। এইরকম নির্গম পথ বিশেষ করে চারকোণা ঝুড়ির অবতরণের সময় ভারসাম্য রক্ষার জন্য দরকারী। [১৬]
সবচেয়ে পরিচিত নির্গম পথ চক্রাকৃতির কাপড় দিয়ে তৈরী যা প্যারাশ্যুট ভেন্ট নামেও পরিচিত। এটি আবিষ্কার করেন ট্রেসি বার্নস। [১৭] এক্ষেত্রে কাপড়্গুলো পাশ বরাবর নিজেদের সাথে যুক্ত হয় এবং এই সংযোগস্থলে ভেন্ট লাইন থাকে। এই লাইনগুলো কেন্দ্রে গিয়ে মিলিত হয়। (এই বিন্যাস দেখতে অনেকটা প্যারাশুট এর মতন। এই নির্গম লাইন গুলো আবার ঝুড়ির সাথে লাগানো একটি নিয়ন্ত্রক লাইনের সাথে সংযুক্ত থাকে। বেলুনের নির্গম খোলা হয় নিয়ন্ত্রক লাইন ব্যবহার করে। একবার নিয়ন্ত্রক লাইন ছেড়ে দিলে গরম বাতাসের চাপ নির্গম লাইনের সুতাকে জায়গামত বসিয়ে দেয়। একটি বেলুনের নির্গম লাইন অল্প সময়ের জন্য খোলা বা বন্ধ করা যায় যাতে দ্রুত উঠানামা করা যায় বায়ুমন্ডলে। (আস্তে আস্তে নিচে নামার জন্য ঠান্ডা বাতাসকে ধীরে ধীরে বেলুন ঢুকতে দেয়া হয় এবং ঠান্ডা হবার সুযোগ দেয়া হয়)। অবতরণের পর বেলুনকে সম্পূর্ণ চুপসে ফেলার জন্য নির্গম পথ সম্পূর্ণ খুলে ফেলা হয়।
বর্তমানে কম ব্যবহৃত হয় এমন একটি পুরাতন নির্গম মডেলের নাম হল ভেলক্রো স্টাইল মডেল। এটাও এক ধরনের সুতার চক্রাকৃতির কাপড় যা বেলুনের উপরিভাগে থাকে। যদিও নির্গম লাইনের ক্রম খোলা বা বন্ধ হওয়া লাইনের বদলে এক্ষেত্রে নির্গম পথ হুক এবং লুপ ব্যবহার করে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে দেয়া হয়। এটি কেবলমাত্র যাত্রা শেষে খুলে দেয়া হয়। ভেলক্রো ভেন্ট থাকলে সাথে পাশ বরাবর "চালক ভেন্ট" বা ম্যানুভারিং ভেন্ট বসানো হয়।
আকার
বিশেষ আকারের পাশাপাশি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আকারের বেলুন প্রস্তুত করা হয়। "উলটানো চোখের জলের ফোঁটা" ই যদিও সবচেয়ে প্রচলিত আকার বেলুনের জন্য। সবচেয়ে সহজ আকারের বেলুন হল কোণকের অগ্রভাগ ছেটে তাতে একটি গোলাকৃতির অংশ বসিয়ে দেয়া। আরো যত্নশীল কারিগরেরা বেলুন বানানোর সময় চেস্টা করেন যাতে পরিধি বরাবর কাপড়ের উপর চাপ সর্বনিম্ন রাখা যায়। এইজন্য এই আকারকে "স্বাভাবিক আকার" বলা যায়। [১৮] তাছাড়া কিছু বিশেষ আকৃতির বেলুন আছে যা প্রস্তুত করা হয় বাতাসের টান সবচেয়ে কমানোর জন্য (উলম্ব দিক বরাবর) , প্রতিযোগিতা গুলোয় উড্ডয়নে কাজে দেয় এটি।
ঝুড়ি
ঝুড়ি সাধারণত বাঁশের চটি বা বেত থেকে প্রস্তুত করা হয়। দুটি উপাদানই যথেষ্ট হালকা, শক্ত এবং উড্ডয়নের জন্য উপযোগী। এই ঝুড়িগুলো সাধারণত আয়তাকার বা ত্রিভুজাকৃতির হয়। তারা কেবল যাত্রীসংখ্যার উপর নির্ভর করে আকৃতিতে আলাদা হয় এবং আকারভেদে দুই থেকে ত্রিশজন যাত্রী নিতে পারে। বড় ঝুড়িগুলোতে সাধারণত ভেতরের দিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা থাকে কাঠামোগতভাবে সহায়তা দেবার জন্য এবং যাত্রীদের আলাদা ভাগে বসার ব্যবস্থা করার জন্য। ঝুড়ির দেয়ালে ছোট ছোট গোলাকৃতির ছিদ্র করা হয় যাতে যাত্রিরা তাদের পা রাখতে পারেন এবং এতে ভর দিয়ে উঠানামা করতে পারেন বেলুনে। [১৯]
কখনো কখনো এলুমিনিয়াম দিয়েও ঝুড়ি তৈরী করা হয় সামগ্রিক ওজন কমানোর জন্য। তাছাড়া তখন একে সহজে স্থানান্তরিত করা যায়। [২০] যেসব চালকের ভূমিতে কোন সাহায্যকারী থাকে না অথবা যারা বিভিন্ন ভাবে (উচ্চতা,স্থায়িত্ব বা দুরত্ব) বেলুনযাত্রায় ইতিহাস গড়তে চান তাদের জন্য এই ধরনের ঝুড়ি অনেক সাহায্যকর। পৃথিবীর চারপাশ ঘুরে আসার উপযোগী ঝুড়িগুলো আবার বিশেষ আকৃতির হয়। [২১] এই ঝুড়িগুলো পুরোপুরি আবদ্ধ থাকে এবং কেবল বেলুনচালক ও সর্বোচ্চ একজন সহযাত্রীবসার মতন জায়গা থাকে।
চুল্লি
চুল্লিতে তরল প্রোপেনকে[২২] গ্যাসে রুপান্তরিত করা হয়,বাতাসের সাথে মেশানো হয়, মিশ্রণকে জ্বালানো হয় এবং উৎপন্ন শিখা ও গ্যাসকে থলের মুখ বরাবর চালনা করা হয়। ক্ষমতাভেদে চুল্লি আলাদা হতে পারে। প্রতিটি চুল্লি সাধারণত ২ থেকে ৩ মেগাওয়াট তাপশক্তি উৎপন্ন করতে পারে। সুতরাং যেসব ক্ষেত্রে বেশি তাপের দরকার হবে, সেখানে প্রয়োজনভেদে দুই, তিন বা চারটি চুল্লি ব্যবহার করতে হতে পারে। [২৩] চালক প্রোপেন কল (ভাল্ভ) খুলে চুল্লি সক্রিয় করেন, এই কলকে বিস্ফোরক কল ও বলা হয়। এই কলটি স্প্রিং এর সাথে লাগানো থাকে যাতে সক্রিয়ভাবে খুলতে এবং বন্ধ হতে পারে। চুল্লিতে একটি সূচনা শিখা থাকে যা প্রোপেন এবং বাতাসের মিশ্রণকে জ্বালায়। বেলুনচালক বাইরের কোন উৎস থেকে এই শিখার সূচনা করেন। বাইরের উৎস এক্ষেত্রে দিয়াশলাই বা ফ্লিন্ট স্ট্রাইকার বা বৈদ্যুতিক স্পার্ক হতে পারে। [২৪]
একের বেশি চুল্লির উপস্থিতিতে চালক তাপের চাহিদা বুঝে এক বা তারচেয়ে বেশি চুল্লি ব্যবহার করেন। তরল প্রোপেনকে আগেভাগে হালকা গরম করে নেয়া হয়। থলের মুখ থেকে চুল্লিটিকে ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা শক্তভাবে ঝুড়িতে লাগিয়ে রাখা যায়। চুল্লিকে গিম্বাল এর সাথে লাগিয়ে রাখা যায় যাতে চালক শিখার দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং কাপড়কে অতিরিক্ত গরম হওয়ার হাত থেকে বাচাতে পারেন। চুল্লিতে দ্বিতীয় একটি প্রোপেন কল থাকতে পারে যা ধীরগতিতে প্রোপেন ছাড়ে এবং একারণে ভিন্ন একটি শব্দ উৎপন্ন করে। একে "ফিসফিস চুল্লি" বলা হয় এবং ব্যবহার করা হয় গরু ছাগল জাতীয় পশুদের দলের উপর দিয়ে যাত্রা করা সময় যাতে তীব্র শব্দ তাদের অসুবিধা না করে। এটি এক ধরনের হলুদ শিখা উৎপন্ন করে যা রাতে আলোর কাজেও ব্যবহার করা যায়।
জ্বালানি ট্যাঙ্ক
সাধারণত বেলনাকৃতির প্রোপেন এর জ্বালানি দিয়ে পরিপূর্ণ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয় যা এলুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল অথবা টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরী হয়। বার্নারে জ্বালানি সরবরাহ করার জন্য এবং পুনরায় জ্বালানি ভরার জন্য একটি সরবরাহ কল থাকে এই ট্যাঙ্ক এ। এতে ফুয়েল গেজ আর প্রেশার গেজ নামে আরো দুটি পরিমাপক থাকতে পারে। ট্যাঙ্কের আকার সাধারণত ১০(৩৮),১৫(৫৭) এবং ২০(৭৬) গ্যালন(লিটার) হয়। [১৩] এগুলো ঝুড়ির বাইরে বা ভেতরে অবস্থান করে এবং উপর নিচ বা অনুভূমিক চলাচলে সাহায্য করে।
ট্যাঙ্ক থেকে চুল্লিতে জ্বালানি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চাপ যথেষ্ট প্রোপেনের বাষ্পচাপই সরবরাহ করে। অন্যথায় নাইট্রোজেন গ্যাস সরবরাহ করা হয় এজন্য। [২৪] ঠান্ডা আবহাওয়ায় যাত্রার সময় ট্যাঙ্ককে আগেভাগে গরম করে রাখা হয় বৈদ্যুতিক উষ্ণ টেপ দিয়ে যাতে পর্যাপ্ত বাষ্প তৈরী হয় [২৫] বসানোর সময় এবং যাত্রাকালে গরম ট্যাঙ্কগুলো সাধারণত তাপনিরোধক কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে তাপ ধরে রাখার জন্য।
যন্ত্রানুসঙ্গ
একটা বেলুনে চালককে সাহায্য করার জন্য অনেক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো থাকে। এর মধ্যে অল্টিমিটার(উচ্চতামাপক যন্ত্র), উলম্ব গতি মাপক যন্ত্র(ভ্যারিওমিটার), থলের তাপমাত্রা এবং বাইরের তাপমাত্রা মাপক। গতি মাপার জন্য এবং দিক নির্দেশের জন্য একটি বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা ভাল সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
সামগ্রিক ভর
একটি ব্যবস্থার সমন্বিত ভর নিম্ন উপায়ে হিসাব করা যায়ঃ [১৩]
উপাদান | পাউন্ড | কিলোগ্রাম | % শতকরা ভর |
---|---|---|---|
১০০,০০০ ঘনফুট
(২৮০০ ঘনমিটার) থলে |
২৫০ | ১১৩.৪ | ৩.৩ |
৫-যাত্রীবহনকারী ঝুড়ি | ১৪০ | ৬৩.৫ | ১.৯ |
দুটি চুল্লী | ৫০ | ২২.৭ | ০.৭ |
৩২০ গ্যালন(৭৫.৭ লিটার) প্রোপেন ভর্তি জ্বালানি ট্যাঙ্ক | ৩ * ১৩৫=
৪০৫ |
১৮৩.৭ | ৫.৪ |
৫ জন যাত্রী | ৫*১৫০=
৭৫০ |
৩৪০.২ | ১০ |
উপ মোট | ১৫৯৫ | ৭২৩.৫ | ২১.২ |
১০০,০০০ ঘনফুট(২৮০০ ঘনফুট গরম বাতাস) | ৫৯২২ | ২৬৮৬.২ | ৭৮.৮ |
সর্বমোট | (৩.৭৬ টন)
৭৫১৭ |
৩৪০৯.৭ | ১০০ |
( ২১০° ফারেনহাইট(৯৯° সে.) তাপমাত্রায় শুষ্ক বাতাসের ঘনত্ব ০.৯৪৮৬ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার হিসেবে গ্রহণ করে)
কার্যপ্রণালী
উত্তোলন সৃষ্টি করা
থলের ভেতরের বাতাসকে গরম করা হলে বাইরের বাতাসের থেকে এর ঘনত্ব কমে যায়। বেলুনটি বাতাসে ভেসে থাকে এর উপর প্রয়োগকৃত প্লবতা বলের জন্য। আর্কিমিডিসের নীতি অনুযায়ী এই বল এবং পানিতে ভেসে থাকা একটি বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল একই রকমের বল। উষ্ণ বায়ু বেলুনের উত্তোলনের পরিমাণ প্রধানত নির্ভর করে থলের বাতাস এবং বাইরের বাতাসের তাপমাত্রার পার্থক্যের উপর। নাইলন দিয়ে তৈরী অধিকাংশ থলেতে সর্বোচ্চ ১২০° সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা তোলা যায়। [২৬]
নাইলনের গলনাঙ্ক (২৩০° সে. ) এই তাপমাত্রা থেকে অনেক বেশি, কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রা নাইলনের সুতার দৃড়তা সময়ের সাথে কমিয়ে দেয়। ১২০° সে. কার্যকরী তাপমাত্রায় একটি থলের কাপড়ে বেলুন সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ ঘণ্টা উড়তে পারে। এর পর কাপড় প্রতিস্থাপন করতে হয়। অনেক বেলুন চালক তাদের থলে এর থেকে কম তাপমাত্রায় চালনা করেন যাতে বেলুনের সুতার স্থায়িত্ব বাড়ে।
বিভিন্ন তাপমাত্রায় ১০০,০০০ ঘনফুট শুষ্ক বাতাসের দাড়া উত্তোলনের পরিমাণ নিচের উপায়ে হিসাব করা হয়ঃ
বাতাসের তাপমাত্রা
ফারেনহাইট(সেলসিয়াস) |
বাতাসের ঘনত্ব
কিলোগ্রাম/ঘনমিটার |
বাতাসের ভর
পাউন্ড(কিলোগ্রাম) |
উত্তোলনের পরিমাণ
পাউন্ড(কিলোগ্রাম) |
---|---|---|---|
৬৮° , (২০°) | ১.২০৪১ | ৭৫১৭(৩৪০৯.৭) | ০(০) |
২১০°,(৯৯°) | ০.৯৪৮৬ | ৫৯২২(২৬৮৬.২) | ১৫৯৫(৭২৩.৫) |
২৫০°(১২০°) | ০.৮৯৭৮ | ৫৬০৬(২৫৪২.৪) | ১৯১২(৮৬৭.৩) |
২০° সে তাপমাত্রায় বাতাসের ঘনত্ব প্রায় ১.২ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার। ৯৯° সেলসিয়াসে থাকা ১০০,০০০ ঘনফুট আয়তনের বেলুনের সর্বমোট উত্তোলন হবে ১৫৯৫ পাউন্ড। এটা পুরো ব্যবস্থার জন্য প্লবতা বল সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। উড্ডয়ন হারের উপর নির্ভর করে প্রাথমিক উড্ডয়নের জন্য যদিও একটু উচ্চতর তাপমাত্রার প্রয়োজন হবে।
বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিক তাপমাত্রার জন্য(২০° সে.) ১ কিলোগ্রাম বস্তু উত্তোলন করার জন্য ৯৯° সে পর্যন্ত গরম করা বেলুনের সাধারণত ৩.৯১ ঘনমিটার বাতাস লাগে। এই নির্দিষ্ট উত্তোলন কেবল ভেতরের তাপমাত্রার উপরেই নির্ভর করেনা, বরং বাইরের তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং চারপাশের বাতাসের আর্দ্রতার উপরেও নির্ভর করে। একটি তুলনামূলক গরম দিনে একটি বেলুন ঠান্ডা দিনের তুলনায় কম উচ্চতায় ওড়ে। কারণ প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার পার্থক্য অর্জন করতে চাইলে কাপড়ের সহনীয় তাপমাত্রা অতিক্রম হয়ে যাবে। তাছাড়া বায়ুমন্ডলের নিম্নাংশে প্রতি ১০০০ মিটারে বেলুনের উত্তোলনের ক্ষমতা ৩% করে কমে। [২৭]
মন্টগলফিয়ার
সাধারণ উষ্ণ বায়ু বেলুনগুলো সাধারণত মন্টগলফিয়ার বেলুন হিসেবে পরিচিত এবং এরা একমাত্র গরম বাতাসের দেয়া প্লবতা বলের উপর নির্ভর করে। [২৮] এই বেলুনের নকশা তৈরী করেছিলেন মন্টগলফিয়ার ভাতৃদ্বয় এবং প্রথম জনসম্মুখে প্রদর্শন করেছিলেন ১৭৮৩ সালের ৪ জুন। এটি ১০ মিনিটের একটি মানববিহীন যাত্রা ছিল, যা বছর শেষে মানব বহন করে আবার উড়াল দেয়। [২৯]
হাইব্রিড বা সংকর
১৭৮৫ সালের দিকে রোজিয়ের বেলুন নামের এক ধরনের সংকর প্রজাতির বেলুন ছিল যার নামকরণ করা হয়েছিল এর নির্মাতা জ্য-ফ্রাঁসোয়া পিলাতে দে রোসিয়ের নামে। এতে বাতাসের থেকে হালকা গ্যাসের(সাধারণত হিলিয়াম) জন্য একটা আলাদা কক্ষ ছিল, গরম বাতাসের জন্য নিচে একটা কোণক ছিল রাতে হিলিয়ামকে গরম করার জন্য। প্রথম প্রথম হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হত কিন্তু পরে উন্মুক্ত শিখার কাছে হাইড্রোজেন পোড়ানোর বিপজ্জনকতার কথা মনে করে বাদ দেয়া হয়। সব আধুনিক রোজিয়ের বেলুন বর্তমানে হিলিয়ামকে উত্তোলন গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করে। [৩০]
সৌরবেলুন
সৌরবেলুন এক ধরনের উষ্ণ বায়ু বেলুন যা ভেতরের বাতাসকে গরম করার জন্য এর কালো থলের দ্বারা গৃহীত সৌর শক্তি ব্যবহার করে। [৩১]
বেলুন চালনা করা
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে উষ্ণ বায়ু বেলুনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত । উত্তর গোলার্ধে করিওলিস প্রভাবের কারণে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বাতাস ডান দিকে মোড় নিতে থাকে।
নিরাপত্তা সরঞ্জাম
বেলুনচালক এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি উষ্ণ বায়ু বেলুনে কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকেঃ
ঝুড়িতে
শিখা নিভে গেলে অথবা বৈদ্যুতিক অগ্নিসংযোগ হঠাত কাজ না করলে চুল্লী আবার জ্বালানোর জন্য চালকের জন্য একটা বিকল্প অগ্নি উৎসের ব্যবস্থা থাকে, যেমনঃ ফ্লিন্ট স্ফুলিংগ লাইটার। অনেক ব্যবস্থায়, বিশেষ করে যাত্রিবহনকারী বেলুনে, সম্পূর্ণ বিকল্প অগ্নি উৎস থাকে। হঠাত কোথাও জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে এটি নিরাপদ অবতরণে সাহায্য করে।
একটি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাও থাকে যা প্রোপেন আগুন নেভাতে পারে। অনেক বেলুনে একটি ১ বা ২ কেজির
অগ্নি নির্বাপক থাকে।
অনেক দেশে একটি অতিরিক্ত দড়ি থাকে বেলুনের সাথে লাগানো নিরাপত্তার জন্য। এই দড়ি লম্বায় ২০-৩০ মিটার যা বেলুনের ঝুড়ির সাথে লাগানো থাকে। ধীর বাতাসে বেলুনচালক এই দড়ি বেলুন থেকে ফেলে দেন যাতে ভূমিতে তার সাহায্যকারীরা এটা ধরে তাদেরকে নিরাপদ অবতরণে সাহায্য করতে পারে।
বাণিজ্যিক যাত্রী বেলুনগুলোতে একজন চালকের জন্য একটা নিরাপত্তা পোশাক বাধ্যতামূলক। এই পোশাকে একটি কোমর বন্ধনী এবং বেলুনের সাথে চালককে আটকে রাখা দড়ি আছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এছাড়াও আছে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, একটি আগুন নিরোধক কম্বল এবং উদ্ধারের জন্য ছুরি।
যাত্রীদের সাথে
বেলুনচালকের অন্তত ক্ষয়রোধী এবং আগুন-নিরোধী কাপড় দিয়ে তৈরী হাতমোজা পড়া উচিত যাতে গ্যাস লিক অথবা হঠাৎ আগুন ধরলে তারা গ্যাস বন্ধ করতে পারেন। তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ এক্ষেত্রে বড়সড় দূর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করে। বাহু এবং পায়েও বিমানচালকের এই আগুননিরোধী কাপড় পড়ে থাকা উচিত। বিশেষ উপায়ে তৈরীকৃত কিছু কাপড় আছে যা থার্মোপ্লাস্টিক অথবা হাইড্রোকার্বন দিয়ে তৈরী। এই কাপড়গুলো এজন্য উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশে ব্যবহার করা যায় না। সাধারণ তন্তু তাপে গলে না, বরং পুড়ে যায়। আগুন নিরোধী তন্তু অনেক উচ্চ তাপমাত্রায় গলে এবং আগুন ধরেই না। অনেক বেলুনচালক যাত্রীদেরও একই রকমের পোশাক পরিধান করতে বলেন এবং গোড়ালির নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ধরনের মজবুত জুতা বা বুট পরিধান করতে বলেন। সর্বশেষে, কিছু বেলুন ব্যবস্থায়, বিশেষ করে যেগুলোয় চুল্লী থলে থেকে ঝোলানো থাকে, সেগুলোতে যাত্রী এবং বেলুন চালকের জন্য শিরস্ত্রাণ(হেলমেট) সরবরাহ করা হয় তাদের মাথার নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য।
ভূমিতে সাহায্যকারী দলদের জন্য
দড়ি ধরে কাজ করতে হয় বলে ভূমিতে অবস্থানকারী দলের প্রত্যেক সদস্যের হাতমোজা পড়তে হয়। একটি বেলুনের ভর এবং বাতাসে এর আয়তন যে পরিমাণ টানের সৃষ্টি করে তা যে কারো হাতে ঘর্ষনজনিত ফোস্কার সৃষ্টি করতে পারে। প্রত্যেক সদস্যেরই মজবুত জুতা এবং লম্বা পায়জামা পড়া উচিত যা রুক্ষ অঞ্চলগুলোয় চলাচলে সাহায্য করবে।
রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত
উষ্ণ বায়ু বেলুনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কাপড়ের থলের কোন অংশ হঠাত ছিড়ে যাওয়া
বা এইরকম নতুন নতুন সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয়। পরিষ্কার করা বা শুকানোর কাজ বেলুনের চালক বা মালিক করে থাকেন। সেলাই জাতীয় কাজ প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে করানো হয় এবং বেলুনের রক্ষণাবেক্ষনের হিসাবতালিকায় টুকে রাখা হয়।
রক্ষণাবেক্ষণ
দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ সেবা পাওয়ার জন্য থলে নিয়মিত পরিষ্কার করে শুকাতে দিতে হবে। এর ফলে ছত্রাক জন্মাতে পারেনা এবং প্যাকেটজাতকরণ, পরিবহন ও ব্যবহারের সময় ক্ষয়ের হাত থেকে বাচায়। শুকনো অথবা ঘোলা জায়গায় অবতরণের পর থলে ভালমতন পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিতে হবে।
চুল্লী এবং জ্বালানি ব্যবস্থা অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে নিরাপদ চালনার জন্য। নষ্ট হয়ে যাওয়া জ্বালানি নল বদলাতে হবে। আটকে যাওয়া অথবা ছিদ্রবিশিষ্ট কপাটকগুলো মেরামত অথবা প্রতিস্থাপন করতে হবে। চটের ঝুড়িতে কিছু মেরামতের দরকার পড়ে মাঝেমাঝে। ঝুড়ীর নিচের অংশের স্কিড নির্দিষ্ট সময় পর বদলাতে হতে পারে।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষনের পাশাপাশি পৃথিবীর অধিকাংশ বেলুনই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিরীক্ষণ করা হয়, যা প্রস্তুতকারকের ঠিক করে দেয়া। (১০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন অথবা ১২ মাস)। অস্ট্রেলিয়াতে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত বেলুনগুলোকে অবশ্যই নিরীক্ষিত হতে হয় কোন স্বীকৃত কারখানা থেকে।
মেরামত
থলের কাপড় ছিড়ে গেলে অথবা পুড়ে গেলে, কাপড়ের টুকড়া ব্যবহার করে ঐ যায়গা মেরামত করা যায় অথবা ঐ অংশ পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করা যায়। তালি মারা কাপড় ব্যবহার করলে তাদেরকে ধরে রাখার জন্য আঠাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয় অথবা সেলাই করা হয়। সম্পূর্ণ প্যানেল বদলানোর ক্ষেত্রে পুরাতন প্যানেলের সেলাই খুলে নতুন একটা প্যানেল ঐ জায়গায় সেলাই করে দিতে হবে।
অনুজ্ঞাপত্র নেয়া
বেলুনের আকার, অবস্থান এবং ব্যবহারের উদ্দ্যেশ্যের নির্ভর করে বেলুনচালকের কয়েক রকমের অনুজ্ঞাপত্র নিশ্চিত করতে হয়।
বেলুনের অনুজ্ঞাপত্র
অন্যান্য আকাশযানের মতই বায়ু বেলুনেরও নিবন্ধন করতে হয়(তাদের নিবন্ধন সংখ্যা ইংরেজি N
দিয়ে শুরু হয়), বাতাসের ভেসে থাকতে সক্ষম কিনা তার জন্য একটি সনদ অর্জন করতে হয় এবং বার্ষিক নিরীক্ষণে উত্তীর্ণ হতে হয়। একটি নির্দিষ্ট আকারের ছোট বেলুন(ঝুড়ি,থলে চুল্লী এবং জ্বালানি ট্যাঙ্কসহ ভরে ১৫৫ পাউন্ডের কম) অধিক ছোট আকাশযান হিসেবে ধরে নেয়া হয় আমেরিকাতে। [৩২]
বিমানচালকের অনুজ্ঞাপত্র
অস্ট্রেলিয়াতে
অস্ট্রেলিয়ান বেলুনচালকদের প্রতিনিধিত্ব করে "অস্ট্রেলিয়ান বেলুনিং ফেডারেশন"[৩৩] এবং সাধারণত চালকরা বিভিন্ন আঞ্চলিক ক্লাবের মাধ্যমে যুক্ত থাকেন। বাণিজ্যিক যাত্রায় ব্যবহৃত বেলুনকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার বেসামরিক বিমানচালনা এবং নিরাপত্তা সংস্থা(CASA) থেকে অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত হতে হবে। তাছাড়া এ সংস্থা থেকে একজন প্রধান বিমানচালক ঠিক করে দেয়া হয়। বড় বেলুনের দ্বায়িত্ব পাবার আগে বেলুনচালকের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। বেলুনের নিবন্ধন ও ঐ সংস্থায় করাতে হয় এবং নিয়মিত নিরীক্ষণের জন্য অংশ নিতে হয়।
যুক্তরাজ্যে
যুক্তরাজ্যে বেলুনের মালিকের কাছে বেসামরিক বিমানচালনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিক ব্যক্তিগত চালক সনদ/অনুমতিপত্র থাকতে হবে। এটা পিপিএল নামে পরিচিত। দুই ধরনের বাণিজ্যিক অনুমতিপত্র দেখা যায় সাধারণতঃ সিপিএল(বি) সীমিত এবং সিপিএল(বি) সম্পূর্ণ। সিপিএল(বি) সীমিত নামক অনুমতিপত্রটি কেবল ঐসব চালকদের জন্য যারা চুক্তিতে অন্যের বেলুন চালায়। বেলুনের যাত্রীদের জন্যও একটি তালিকা রাখতে হয় চালকের কাছে।
যুক্তরাস্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রে একজন চালকের অবশ্যই অনুমতিপত্র থাকতে হবে যা এফএএ (ফেডেরাল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন) কর্তৃক প্রদান করা হয় এবং এর অবশ্যই "বাতাসের চেয়ে হালকা বেলুন" নাম থাকতে হবে। শুধুমাত্র উষ্ণ বায়ু বেলুন চালাতে সক্ষম এমন চালক ব্যতীত অন্য কোন চালকের অতিরিক্ত অনুমতিপ্ত্র লাগে না। যদিও ছোট বেলুন চালানোর জন্য তাদের অনেক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
ভাড়ায় যাত্রী বহন করতে একজন চালকের ব্যবসায়িক সনদপত্র থাকতেই হবে। বাণিজ্যিক উষ্ণ বায়ু বেলুনচালকরা প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করে থাকেন। যদিও অধিকাংশ বেলুনচালক মনের আনন্দে বাতাসে ভাসেন, অনেকেই এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। [৩৪]
দূর্ঘটনা এবং বিভিন্ন ঘটনা
- ১৯৮৯ সালের ১৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার এলিস স্প্রিংএ দুইটি উষ্ণ বায়ু বেলুনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় । এতে একটি বেলুনের ১৩ জন যাত্রীর সবাই মৃত্যুবরণ করেন ।[৩৫]
- ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি একটি উষ্ণ বায়ু বেলুন ইংল্যান্ডের সমারসেটে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুইজন যাত্রীর দুজনই মৃত্যুবরণ করেন। [৩৬]
- ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের কার্টারটনে একটি উষ্ণ বায়ু বেলুন বৈদ্যুতিক তারের সাথে লেগে দুর্ঘটনায় পড়ে, আগুন ধরে এবং ভূমিতে ক্র্যাশ করে। ১১ জন যাত্রীর সবাই মারা যান। [৩৭]
- ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট স্লোভেনিয়ার লুভলানা অঞ্চলে একটি বেলুন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হয় এবং এতে আগুন ধরে। এতে ৩২ জন যাত্রীর ৬ জন মারা যান এবং বাকিরা আহত হন। [৩৮]
- ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মিশরের লুক্সরে বিদেশী যাত্রী বহনকারী একটি উষ্ণ বায়ু বেলুনে আগুন ধরে এবং ২১ জন যাত্রীর ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেন। [৩৯]
- ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই টেক্সাসের লকহার্টে একটি উষ্ণ বায়ু বেলুনে আগুন ধরে যায় এবং ১৬ জন যাত্রীর সবাই মারা যান। [৪০]
প্রস্তুতকারী
উষ্ণ বায়ু বেলুনের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্যামেরন বেলুন্স। এটি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের একটি কোম্পানি যার অধীনে ইংল্যান্ডের অয়েস্ট্রিতে অবস্থিত লিন্ডস্ট্র্যান্ড বেলুন নামক আরেকটি কোম্পানি আছে। ক্যামেরন বেলুন্স, লিন্ডস্ট্র্যান্ড এবং থান্ডার ও কোল্ট - এই তিনটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ আকৃতির বেলুন তৈরি করে। এই বিশেষ বেলুনগুলোও উত্তোলনের জন্য একই মূলনীতি অবলম্বন করে।
বেলুন উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান এর নাম স্পেনের আলট্রাম্যাজিক কোম্পানি, যারা বছরে ৮০ থেকে ১২০ টি বেলুন তৈরী করে। এরা অনেক বড় আকারের বেলুন বানায়, যেমন N-500 যা ঝুড়িতে ২৭ জন যাত্রী নিতে পারে এবং বিভিন্ন বিশেষ আকৃতির বেলুন তৈরী করে থাকে।
বিশ্বের তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানের একটি হল কুবিয়েক বেলুন্স। চেক রিপাব্লিকের এই প্রতিষ্ঠান এর পণ্য পুরো বিশ্বে সরবরাহ করে থাকে। এরা বছরে ১০০ থেকে ১১৫ টি বেলুন তৈরী করে। এরাও বিশেষ আকৃতির ,FAA/EASA দ্বারা স্বীকৃত এবং বাতাসে ভাসমানযোগ্যতার সনদপ্রাপ্ত বেলুন বানায়।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বেলুন প্রস্তুতকরণ বন্ধ করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ডাকোটায় অবস্থিত এরোস্টার ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেটেড দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেলুন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে সবচেয়ে পুরোনো সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নাম এডামস বেলুন যা নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত। ফায়ারফ্লাই বেলুন্স, যা আগে দ্য বেলুন ওয়ার্কস নামে পরিচিত ছিল, নর্থ ক্যারোলিনার স্টেটসভিলে অবস্থিত। জর্জিয়ার হেড বেলুন্স এরকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
কানাডার প্রধান বেলুন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হল সান্ড্যান্স বেলুন্স এবং ফ্যান্টাসি স্কাই প্রোমোশন্স। অন্যানা দের মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়ার কাভানাহ বেলুন্স, জার্মানির শ্রোডার ফায়ার বেলুন্স, এবং ফ্রান্সের লোপিজ বেলুন্স।
তথ্যসূত্র
- ↑ D. Crouch, Tom (২০০৮)। Lighter Than Air.। Johns Hopkins University Press। আইএসবিএন 978-0-8018-9127-4।
- ↑ ""U.S. Centennial of Flight Commisstion: Early Balloon Flight in Europe""। U.S. Centennial of Flight Commission। ২০০৮। Archived from the original on ৯ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৯, ২০১৯।
- ↑ Beischer,Fregly, DE,AR (১৯৬২)। Animals and man in space. A chronology and annotated bibliography through the year 1960.। U.S.: U.S. Naval School of Aviation Medicine।
- ↑ da Torre do Tombo, Arquivo Nacional (১৯৮২)। "Cartas Consultas e Mais Obras de Alexandre de Gusmão। পর্তুগাল: Imprensa Nacional - Casa da Moeda। পৃষ্ঠা 201–209।
- ↑ Bartolomeu, De Gusmão। ""Reproduction fac-similé d'un dessin à la plume de sa description et de la pétition adressée au Jean V. (de Portugal) en langue latine et en écriture contemporaine (1709) retrouvés récemment dans les archives du Vatican du célèbre aéronef de Bartholomeu Lourenco de Gusmão "l'homme volant" portugais, né au Brésil (1685-1724) précurseur des navigateurs aériens et premier inventeur des aérostats. 1917""।
- ↑ ""Dr. Vijaypat Singhania enters the Guinness World Records"" (পিডিএফ)। ২৪ জুন ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯।
- ↑ Konyukhov, Fedor (২০১৬)। "Experience: I flew solo around the world in a hot-air balloon"। The Guardian। Archived from the original on ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১০, ২০১৯।
- ↑ "Balloon Propane Tanks"। http://www.pilotoutlook.com/। জুন ১০, ২০১১। Archived from the original on ১০ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ "Machine Style 56500"। Arch Sewing Company। ২০০৩। ৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ Nachbar ,Stumpf, Daniel, Paul (২০০৮)। ""Construction basics""। XLTA। Archived from the original on ২২ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ Petrusso, Annette (২০১০)। ""How Things Are Made: Hot Air Balloon, The Manufacturing Process""। How Products are Made। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ Radowski, Jon (২০১০)। ""How To Sew A Hot Air Balloon!""। Apex Balloons। Archived from the original on ২০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১১, ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ""Cameron Balloons Fuel Tanks""। Cameron Balloons। ২০১৬। Archived from the original on ১২ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৯।
- ↑ ""Mid-Atlantic Balloon Repair: Balloon Envelope Fabric Recoating""। apexballoons। ২০০৭। Archived from the original on ২৪ জানুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৯।
- ↑ ক খ ""Lindstrand Hot Air Balloons: Cloudhopper""। Lindstrand। ২০০৮। ১ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৯।
- ↑ ""Avian Balloon Corporation: The Avian Envelope""। Avian Balloon। ২০০৯। ১৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৯।
- ↑ Wesner, David M. (২০১০)। ""The early years of sport ballooning""। Archived from the original on ২১ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৯।
- ↑ "Balloon Envelope Design"। Airship and Blimp Resources। ২০০৩। Archived from the original on ১৫ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ "THE BASKET"। eballoon। ২০০৯। Archived from the original on ৪ মার্চ ২০২১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ Arnaud, Deramecourt, (২০০২)। ""Experimental Buildings: Collapsible Basket""। Experimental buildings। Archived from the original on ১ মার্চ ২০২১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ ""Virgin Global Challenger: An Interview with Per Lindstrand""। Balloon Life। ১৯৯৭। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ "THE BURNER"। eballoon। Archived from the original on ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ ""Example Balloon Configurations""। BETTER BALLOONS। ২০০৯। Archived from the original on ১ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ ক খ ""Lindstrand Fuel System: Burners & Tanks""। lindstrand। ২০০৭। Archived from the original on ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০১৯।
- ↑ ""Nitrogen vs. Heat Tapes""। the original। ২০০৭। Archived from the original on ১১ অক্টোবর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৬, ২০১৯।
- ↑ ""Department of Transportation, Federal Aviation Administration, Type certificate data sheet no. A33CE"" (পিডিএফ)। Department of Transportation, Federal Aviation Administration। ২০০৮। Archived from the original on ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৯।
- ↑ ""How to Calculate the Weight of Air and Model Hot Air Balloon Lift""। ২০০৮। Archived from the original on ১১ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৯।
- ↑ ""NASA: Montgolfiere balloon missions for Mars and Titan"" (পিডিএফ)। the original। ২০০৮। ২৪ জুন ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৯।
- ↑ Rodney P. Carlisle , John Wiley and Sons (২০০৪)। Scientific American Inventions and Discoveries। আমেরিকা: Scientific American। পৃষ্ঠা p 177। আইএসবিএন 0-471-24410-4।
- ↑ Amsbaugh, Allen (২০০৯)। ""Balloon Incidents""। ASRS Directline। Archived from the original on ৭ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৮, ২০১৯।
- ↑ ""Solar Balloons""। ২০০৭। ১৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৮, ২০১৯।
- ↑ "Ultralight aircraft (United States)"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-২৩।
- ↑ ""Australian Ballooning Federation""। ২০১৫। Archived from the original on ১০ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২১, ২০১৯।
- ↑ ""Professional Balloon Pilots""। ২০০৭। Archived from the original on ৩১ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২১, ২০১৯।
- ↑ "1989 Alice Springs hot air balloon crash"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-০২।
- ↑ "Two die in hot air balloon crash" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১।
- ↑ "2012 Carterton hot air balloon crash"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-১৬।
- ↑ "2012 Ljubljana Marshes hot air balloon crash"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-২০।
- ↑ "2013 Luxor hot air balloon crash"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-০৭।
- ↑ "2016 Lockhart hot air balloon crash"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৭-১৪।