কৃষ্ণরাম দাস
কৃষ্ণরাম দাস মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের মঙ্গলকাব্য ধারার (সপ্তদশ শতকের) একজন বিশিষ্ট কবি ছিলেন। তার জন্মস্থান অবিভক্ত বাংলার চব্বিশ পরগণার কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রাম। তিনি ‘দক্ষিণ রায়ের উপাখ্যান’ বা ‘রায়মঙ্গল’, ‘বিদ্যাসুন্দর’ বা ‘কালিকা মঙ্গল' 'অশ্বমেধ পর্ব্ব’, 'ষষ্ঠীমঙ্গল', 'শীতলামঙ্গল', ‘ভজন মালিকা’ প্রভৃতি গ্রন্থ (পুঁথি) রচনা করেন। শেষজীবনে কৃষ্ণরাম চৈতন্য মহাপ্রভুর একজন অনুরাগী ভক্ত হয়েছিলেন।[১]
জন্ম-বৃত্তান্ত
[সম্পাদনা]আনুমানিক ১৬৬৬ খ্রীস্টাব্দে কলকাতার উত্তরে উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় এখনকার বেলঘরিয়া রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী নিমতায় এক কায়স্থবংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ভগবতী দাস। তার কাব্যে আছে,
ভাগীরথী পূর্বতীর অপুরুব নাম
কলিকাতা বন্দিনু নিমিতা জন্মস্থান।
কিংবা,
অতি পুণ্যময় ধাম সবকার সপ্তগ্রাম
কলিকাতা পরগণা তায়
ধরণী নাহিক তুল জাহ্নবীর পূর্বকূল
নিমিতা নামেতে গ্রাম যায়। ( - কালিকামঙ্গল)
কবির লেখা এই পংক্তিগুলি কলকাতা অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য দেয়।[২]
কাব্য পরিচয়
[সম্পাদনা]দক্ষিণ রায়ের উপাখ্যান
[সম্পাদনা]কৃষ্ণরাম দাসের কাব্যগুলির মধ্যে 'রায়মঙ্গল' চব্বিশ পরগণার আঞ্চলিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। কথিত আছে, সুন্দরবনের ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণরায় কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে কৃষ্ণরাম তার মাহাত্ম্য প্রচার উদ্দেশ্যে 'রায়মঙ্গল' (১৬৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ) রচনা করেন। এটি মূলত আঞ্চলিক প্রভুত্বের অধিকার নিয়ে সুন্দরবনের হিন্দু ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণরায়ের সঙ্গে ইসলাম ধর্ম-প্রচারক পীর বড়খাঁ গাজীর যুদ্ধের কাহিনী। দুই বীরের এই ভয়াবহ যুদ্ধ প্রশমনের জন্য হিন্দু-মুসলিমের মিলিত দেবতা অর্ধ-শ্রীকৃষ্ণ-পয়গম্বরের (কৃষ্ণপয়গম্বর) আবির্ভাব ঘটে। কাব্যে আছে,
অর্দ্ধেক মাথায় কালা একভাগা চুড়া টালা
বনমালা ছিলিমিলী তাতে।
ধবল অর্দ্ধেক কায় অর্দ্ধ নীলমেঘ প্রায়
কোরান পুরাণ দুই হাতে।।[৩]
অন্যান্য কাব্যকৃতি
[সম্পাদনা]প্রচলিত বিদ্যা ও সুন্দরের কাহিনী অবলম্বন করে তিনিই প্রথম 'কালিকামঙ্গল' কাব্য রচনা করেন। এছাড়া 'ষষ্ঠীমঙ্গল', 'শীতলামঙ্গল', 'ভজন মালিকা' প্রভৃতি গ্রন্থ তার অনুপম প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করছে।[১]