গোকর্ণী
গোকর্ণী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার মগরাহাট থানার অন্তর্গত অন্যতম একটি গ্রাম। গ্রামটি মূলত গোকর্নী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ন এলাকা। গোকর্নী মূলত বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। নারিকেলডাঙ্গা, দুলালপুর, মাখালিয়া, হংসগেরিয়া, রায়নগর, রামনগর, বেনীপুর, মধ্য গোকর্নি ও পশ্চিম গোকর্নী এই কয়টি অঞ্চল নিয়ে গোকর্নি গ্রাম গড়ে উঠেছে। এই গ্রামে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে এবং গ্রামীণ ব্যাংকও রয়েছে। এই গ্রাম প্রাকৃতিক দিক থেকেও অপরূপ। এই গ্রাম মূলত উনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত রামসিতা মন্দিরের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। এই গ্রামের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলি হল- রামসিতা মন্দির , গোকর্নী বাজার , হ্্সগেরিয়া শ্মশান , দত্তপাড়া স্নানের ঘাট, বাবাঠাকুর তলা, শীতলা মন্দির , বটতলা ইত্যাদি। গ্রামটিতে একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে। এবং একটি গ্রামীণ পোষ্ট অফিসও রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো এই যে, গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা খুবই বেহাল। সর্বোপরি এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রগতিশীল গ্রাম। এই গ্রামের মানুষদের অধিকাংশেরই জীবিকা হল কৃষিকাজ। খুবই অল্প পরিমান মানুষ চাকুরীর সঙ্গে যুক্ত। এই গোকর্নী মূলত পেয়ারা চাষের জন্য এবং নলেন গুড়ের জন্য বিখ্যাত। এই গ্রাম শিয়ালদহ- ডায়মন্ড হারবার লাইনের উত্তর রাধানগর স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামে একটি প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র আছে কিন্তু কোনো উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। গ্রামের মূল রাস্তাটির অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ এবং বেহাল। প্রশাসনকে অতি সত্ত্বর কিছু ব্যাবস্থা নিতে হবে।
আটচালা ও রামসীতা মন্দির
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ১২ ফুট ৭ ইঞ্চি X ১২ ফুট ৭ ইঞ্চি মাপের ও ২৮ ফুট উচ্চতার পূর্বমুখী অলিন্দবিহীন আটচালা শিবমন্দির নির্মিত হয়। ৭ ফুট X ৭ ফুট মাপের গর্ভগৃহের ছাদ গম্বুজাকৃবিশিষ্ট। মন্দিরটি নির্মাণে ২১ X ১২ X ৫ ঘন সেন্টিমিটার মাপের পাতলা ইট ব্যবহৃত হয়েছে। এটি গোকর্নী গ্রামের অন্তর্গত দত্ত পাড়ায় অবস্থিত। এর সংলগ্ন একটি বিশাল স্নানের ঘাট আছে যেটি দত্তপাড়া স্নানের ঘাট নামে পরিচিত। এটি গোকর্নী গ্রামের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি মূলত দত্ত বংশের পূর্বপুরুষদের দ্বারা নির্মিত। এর পাশাপাশি প্রত্যেক বছর আটচালাতে দুর্গাপুজো হয়। এটি গোকর্নী গ্রামের প্রাচীনতম দুর্গোৎসব রূপে বিবেচিত হয় । এটি কবে শুরু হয়েছিল সেই সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না তবে, এটি হল অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো। একচালার প্রতিমাতে, ষষ্ঠীর দিন বোধন হয় এবং দশমীর দিন পুজো সমাপ্ত হয়। সম্প্রতি আম্ফানে আটচালাটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু, তা সত্ত্বেও বর্তমানে এটি স্ব মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। [১]:৯৬,৯৭
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সাগর চট্টোপাধ্যায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার পুরাকীর্তি, প্রকাশনা প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ৩৩ চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ, কলকাতা-৭০০০১২, প্রথম প্রকাশ, ২০০৫